ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের নেত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে রোববার রাত ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাকে মারধর-হেনস্তা, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হল প্রভোস্ট।
এদিকে এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ও ওই ছাত্রী অভিযোগ করায় সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলে আন্দোলন ও ভিসির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করে রাত ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় তারা নবীন ওই ছাত্রীর বহিষ্কার দাবি করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে অভিযুক্ত অন্তরা একটি এবং তার অনুসারী ৫৯ শিক্ষার্থী স্বাক্ষর সম্বলিত অপর একটি আবেদন হল প্রভোস্ট বরাবর দেন। এতে তারা ফুলপরীর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হলের মেয়েদের বহিরাগত দ্বারা হুমকির বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা চান। একইসঙ্গে অন্তরা আবেদনে ফুলপরীর অসৎ আচরণ, বহিরাগত দ্বারা হুমকি এবং মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার ঘটনার বিচার চেয়ে হল প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী।
অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ক্লাস শুরু হওয়ায় ৭ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬নং কক্ষের এলাকার পরিচিত এক সিনিয়রের গেস্ট হিসেবে হলে থাকতে শুরু করেন তিনি। ১১ ও ১২ তারিখ দুই দফায় অন্তরার নেতৃত্বে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাবাচ্ছুমসহ অন্তত ৭-৮ জন কর্তৃক র্যা গিংয়ের শিকার হন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে আমার গোপন ভিডিও ধারণ করে রাখেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এ ঘটনা কাউকে জানালে জীবননাশের হুমকি ও ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়।
নির্যাতনের বর্ণনায় ওই ছাত্রী বলেন, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাচ্ছুম রাতে তাকে কক্ষে দেখা করতে বলেন। অসুস্থ থাকায় দেখা না করতে পারায় পরে তারা আমার ওপর চড়াও হতে থাকে এবং তাদের রুমে গেলে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। রোববার রাত ১১টায় অন্তরাসহ তার সঙ্গে থাকা ৭-৮ জন গণরুমে নিয়ে গিয়ে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। এর প্রতিবাদ করলে র্যা র্যা গিংকারীরা তার মুখ চেপে ধরে এবং সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারে। এ সময় তারা বলেন- ‘আমরা কি করতে পারি জানিস তুই? আমাদের সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া আছে?’
ভয়ে কান্না করে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা ওই ছাত্রীকে লাথি মারেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখেন। একটা ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন। এছাড়া ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে সেটার ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিও ধারণকারী ওই ছাত্রীর নাম বলেতে পারেনি ভুক্তভোগী। ভিডিওগুলো তাদের সংরক্ষণে আছে। ভিডিওর বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন ভুক্তভোগী। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে পরেরদিন প্রাণের ভয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যায়।
অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী বলেন, সে আমার নাম করে আমাকেই ভয় দেখাচ্ছিল। এজন্য তাকে বুঝানো হয়েছে। তার সঙ্গে আমার এমন ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তিনি ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ফুলপরী ঢাবি সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন নামের এক ভাইকে দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছে। এ সময় তিনি আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ছাড়া আমাকে ঢাকায় এসে দেখা করতে বলেন এবং এক সেকেন্ডের মধ্যে গুম করে দেওয়ার হুমকি দেন। রাতেই বিষয়টি হল প্রভোস্টকে অবগত করি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনা যদি সত্য হয় এবং তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে তার শাস্তির দাবি জানাব। একইসঙ্গে আমরা সাংগঠনিকভাবেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামছুল আলম বলেন, হলের আবাসিক শিক্ষক প্রফেসর ড. আহসানুল হককে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি যাচাইবাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই র্যাগিং অ্যালাও না। আমি নীতিগতভাবে এটা কখনো সমর্থন করি না। বিষয়টা কিভাবে কি ঘটলো আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উৎস: দৈনিক যুগান্তর