মিনহাজ দিপু, খুলনা থেকেঃ সুন্দরবন উপকূলীয় গ্রামের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে চলেছে কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। উপকূলীয় দুর্গম এ উপজেলার সাত ইউনিয়নের ১৯৩টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে ৮ হাজার ৫২৪ জন সদস্য এর প্রত্যাক্ষ সুফল ভোগ করছেন পরোক্ষভাবে এর ফল ভোগ করছেন সদস্যদের পরিবারবর্গ সহ প্রায় আরো অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সেই ২০০৯ সাল থেকে হাটি হাটি পা পা করে উপজেলার দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে সমিতির মাধ্যমে তহবিল গঠন করে, মৎস্য চাষ, কাকড়া চাষ, গবাদি পশু পালন, গরু মোটাতাজা করন, হাঁস মুরগি পালন, সবজি চাষ, ধান চাষ, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মধু আহরণ সহ প্রভৃতি খাতের মাধ্যমে সেবা মূল্যে ঋণ নিয়ে সবাই স্বাবলম্বী হয়েছে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আর লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষায়িত কয়রা উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে একটি বাড়ি একটি খামার যা ২০০৯ সালে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প করন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে মোট ৬০ জন সদস্য, ৪০ জন মহিলা ও বিশজন পুরুষ নিয়ে সমিতির কাজ শুরু হয়। উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রম কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ২০১৪ সালে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটি উপজেলার দরিদ্র ও সুবিধামঞ্চিত মানুষদের নিয়ে সমিতির মাধ্যমে তহবিল গঠন করে দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। নারীদের আয় বদ্ধক কাজে নিয়োজিত করে আর্থিক স্বাবলম্বী, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিসহ কৃষির বিভিন্ন সেক্টর তথা কৃষি, মৎস্যচাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, নার্সারী ও ফল চাষ ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে ট্রেনিং সহ প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনায় এনে একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে গড়া পুঁজি সহায়তায় নিজ আঙ্গিনায় উৎপাদনমুখী কার্যক্রম গ্রহণ, বিপণন ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের সফলতা উপকূলীয় এ কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দরিদ্র মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করছে। দরিদ্রদের জমানো প্রায় ছয় কোটি ৩৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকা ও ঋণের ৪৩ কোটি ৫৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৯শত ২৪ টাকায় ব্যাংকটি দরিদ্রদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য সুমিত্রা রানী মন্ডল বলেন, ২০১৪ সালে যখন সমিতির সদস্য হই তখন সংসারে অভাব অনটনে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম প্রাথমিক পর্যায়ে সমিতির মাধ্যমে পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ শেষে সমিতি থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষের মাধ্যমে লাখপতি হয়েছি। আমি এবং আমার পরিবার কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। সুফল ভোগের কথা জানালেন গোলখালী গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য বিজলী খাতুন, মারুফা খাতুন, রুহুল কুদ্দুস সহ অনেকে। কয়রা সদর ইউনিয়নের ১ নং কয়রা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য মিজানুর রহমান ঢালী ৩ নং কয়রা সমিতির সদস্য শাহিদুজ্জামান, দক্ষিণ মদিনাবাদ গ্রাম উন্নয়ন সমিতির বিকাশ চন্দ্র মন্ডল,৬ নং কয়রা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য আখতারুজ্জামান সহ আরো অনেকেই শুনান তাদের দারিদ্রতার গল্প। কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে তিল তিল করে জমানো অর্থ ও সমিতির মাধ্যমে সেবা মূল্যে ঋণ নিয়ে আজ তারা সাবলম্বী। তারা বলেন,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক-ই আমাদের মত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষদের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সদস্য অভিযোগ করে বলেন আগের কর্মকর্তা মিলন কান্তি সরকার শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালে সেবার মান কমে গিয়েছিল। তিনি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় আত্মীয়করণ অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসাদাচরণ সহ দীর্ঘদিন একই চেয়ারে থাকায় নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ওই কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয় বলে শুনেছি, তবে গত বছরের অক্টোবর মাসে মণীষ কুমার রায় কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সিনিয়ার অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকে ব্যাংকটির প্রাণচঞ্চালো ফিরে আসে। বেড়েছে সেবার মান। শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে নিরোলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
কয়রা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মণীষ কুমার রায় বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষায়িত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রামের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়ন ঘটাতে পেরে নিজের কাছে আত্মতৃপ্তি মনে হচ্ছে। তিনি আগামীতে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো অগ্রগামী করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাব।