তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বসতবাড়ির উপর দিয়ে ও রাস্তার পাশ ঘেঁষেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে টানানো হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। এতে বিপাকে পড়েছেন বড়লেখা সদর ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিওসি কেছরিগুল গ্রামের বাসিন্দারা। যেকোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ইতিমধ্যে দুর্ঘটনায় এক শিশুও আহত হয়েছে। এরপরও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। বিষয়টিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চরম গাফিলতি ও উদাসীনতা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে বড়লেখা উপজেলার বড়লেখা সদর ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিওসি কেছরিগুল গ্রামে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঞ্চালন লাইন টেনে গ্রাহকদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। ওই সময় কারও বসতবাড়ির উপর দিয়ে, কারও বাড়ির পাশ ঘেঁষে, আবার বাড়িতে যাওয়া-আসার রাস্তার পাশ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সঞ্চালন লাইন টানানো হয়। এসব লাইন মাটি থেকে সহজে স্পর্শ করা যায়। লাইন টানানোর সময় ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে এলাকার লোকজন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং বিদ্যুৎ অফিসকে জানালেও তারা কোনো বাঁধা মানেনি। বিদ্যুৎ সংযোগের পর থেকেই তারা সব সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কে ভুগছেন। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে একাধিকবার জানিয়েও কোনো সূরাহা হয়নি। বড়লেখা সদর ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লামা বেকি জামে মসজিদ ও পাশ্ববর্তী আবুল হোসেনের বাড়ির প্রবেশ পথের উপর দিয়ে যাওয়া এলটি ফেইজ লাইন (কভার ছাড়া তার) ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেখা গেছে। ওই ওয়ার্ডের বিওসি কেছরিগুল গ্রামের নোমান আহমদ মনার বাড়িতে যাওয়া-আসার রাস্তা ঘেঁষে এবং খছরুল ইসলাম, আলিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগমের বসত বাড়ি ঘেঁষেই এলটি ফেইজ লাইন (কভার ছাড়া তার) ঝুঁকিপূর্ণভাবে টানানো আছে।
বিওসি কেছরিগুল গ্রামের মো. খছরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ির পিছন দিকে এমনভাবে লাইন টানা হয়েছে চাইলেই হাত দিয়ে ওই লাইন ধরা যাবে। ওই জায়গায় আমার সুপারি গাছ, পান গাছ আছে। পান গাছ পরিষ্কার করতে গেলে ভয় লাগে। বাড়িতে আমরা চারটি পরিবার থাকি। ১২-১৪ জন ছেলে-মেয়ে আছে। দুর্ঘটনার ভয়ে বাচ্চাদের ওদিকে যেতে দেই না। সব সময় আতঙ্কে থাকি কখন কি ঘটনা ঘটে। লাইন টানার সময় আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম এভাবে না টানতে। কিন্তু তারা মানেনি শোনেনি কোন কথা। লাইন চালুর পর বারবার অফিসের লোকজনকে জানিয়েছি। তারা কোনো সমাধান দিচ্ছে না।’
একই গ্রামের আলিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম বলেন, ‘বাড়ি ঘেঁষে লাইন টানার সময় আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু আমাদের কথা তারা শুনেনি। এরপর অনেক বার অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের মূল্যায়ন এই দিচ্ছে না। সব সময় আতঙ্কে থাকি আমরা। বাচ্চারা যদি খেলাধুলা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। কখন কার বড় দুর্ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারছি না। বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে পল্লী বিদ্যুতের ঘুম ভাঙবে না বলে মনে হচ্ছে।’
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, বিদ্যুতের লাইনের ওপরের গাছ-পালা কাটার সময় পল্লী বিদ্যুতের লোকজন আসেন না। তারা দৈনিক মজুরিতে স্থানীয় মানুষ পাঠিয়ে দেন। এরা নিজেদের মতো কাজ করে যায়। তাই গাছ-পালা পড়েও লাইনে আরও ঝুঁকি তৈরি হয়।
বড়লেখা সদর ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন আউয়াল বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ লাইন আছে। লামা বেকি জামে মসজিদের ওখানে লাইন ঝুলে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ লাইন সংস্কারের জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুহেল রানা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এলটি ফেইজ এভাবে কাভার ছাড়া থাকার কথা নয়। কেউ আমাদের কাছে অভিযোগও করেনি। যদি থাকে (ফেইজ ছাড়া) তবে আমাদের বিষয়টি জানাতে হবে। আর যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি বিষয়টি নিয়ে আমি ডিপার্টমেন্টে আলোচনা করবো।’