যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করতে নতুন একটি বিল তুলেছেন দেশটির তিন জনপ্রতিনিধি; এর মাধ্যমে নতুন মাত্রা পেল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব।
খসড়া প্রস্তাবটি আইন হিসেবে কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে টিকটকের সকল লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে এবং শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ হবে সেখানে।
সিএনএন জানিয়েছে, নতুন খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন ‘সেনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি’র শীর্ষ রিপাবলিকান সেনেটর মার্কো রুবিও; তার সঙ্গে আছেন আরও দুই জনপ্রতিনিধি। বিলে সরাসরি টিকটক এবং প্ল্যাটফর্মটির মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের নাম উল্লেখ করেছেন তারা।
‘যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারে সক্ষম’ বিদেশি প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত দেশগুলো থেকে নিয়ন্ত্রিত এবং প্রতি মাসে অন্তত ১০ লাখ নিয়মিত ব্যবহারকারী আছে এমন সকল সোশাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়।
বিদেশি প্রতিপক্ষ হিসেবে চীন, রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া, কিউবা এবং ভেনেজুয়েলার মত দেশগুলোর কথাই বলেছেন মার্কিন সেনেটররা।
সিএনএন লিখেছে, টিকটকের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের ক্রমবর্ধমান শঙ্কারই প্রতিফল ঘটেছে ওই বিলে।
খসড়া প্রস্তাবে রিপাবলিকান পার্টির জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ডেমোক্রেটিক পার্টিরও সমর্থন আছে। গত মাসে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক যৌথ নিবন্ধে এমন নতুন খসড়া প্রস্তাবের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেনেটর মার্কো রুবিও ও মাইক গ্যালাহার।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্যে সরকারি ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন রিপাবলিকান পার্টির গভর্নররা।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা ধরে রাখতে বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশটির সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে আসছেন টিকটকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, ‘জাতীয় নিরাপত্তা শঙ্কা দূর করে’ মার্কিন গ্রাহকদের সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন তারা।
সেনেটের রুবিও এক বিবৃতি বলেছেন, “সরকার টিকটকের হুমকি থেকে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের রক্ষা করতে এখন পর্যন্ত একটিও অর্থবহ পদক্ষেপ নেয়নি। সিসিপির পাপেট কোম্পানির (বাইটড্যান্স) সঙ্গে অর্থহীন আলোচনায় নষ্ট করার মত সময় আর নেই; বেইজিং নিয়ন্ত্রিত টিকটক নিষিদ্ধ করার এটাই সময়।”
এর প্রতিক্রিয়ায় টিকটক মুখপাত্র হিলারি ম্যাককেইড এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রশাসনকে টিকটকের নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার তাড়া না দিয়ে কংগ্রেসের কিছু সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে টিকটক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে এটা কোনো ভূমিকাই রাখবে না।”
টিকটক এর আগেও দাবি করেছে যে, তারা চীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের কোনো তথ্য সরবরাহ করে না এবং চীন থেকে কেউ আমেরিকানদের ডেটায় প্রবেশাধিকার পাবেন কি না, সে সিদ্ধান্তও যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় কর্মীদের হাতে থাকে।
তবে চীনের কর্মীদেরও যে আন্তর্জাতিক ব্যবহারকারীদের গোপন ডেটায় প্রবেশের সুযোগ আছে, সে বিষয়ে আগেই স্বীকারোক্তি দিয়েছিল টিকটক।
যুক্তরাষ্ট্রে সেনেটর রুবিওর নতুন বিল টিকটকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একমাত্র প্রস্তাব নয়। গত বছর সকল সরকারি সংস্থার ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
অ্যাপ নির্মাতাদের প্ল্যাটফর্মের মালিকানার তথ্য প্রকাশে বাধ্য করতে আরেকটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেনেটর রুবিও। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের গোপন তথ্যে টিকটকের চীনা কর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার দাবিও রয়েছে দেশটির জনপ্রতিনিধিদের।
ইতোমধ্যে সরকারি ডিভাইসে টিকটকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং একাধিক সরকারি সংস্থা।