শুরু হলো একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশন। করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে বুধবার (১০ জুন) বিকাল ৫টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেওয়া হয়।
মনোনীত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- মুহম্মদ ফারুক খান, ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম, মুহিবুর রহমান মানিক, কাজী ফিরোজ রশীদ ও মেহের আফরোজ চুমকি। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা সংসদের বৈঠক পরিচালনা করেন।
এই অধিবেশনেই বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এটি হবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দ্বিতীয় বাজেট উপস্থাপন। অবশ্য গতবছর বাজেট পেশের সময় শারীরিক অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী পুরো সময়টা বক্তব্য দিতে পারেননি। তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট বক্তব্য দেন।
অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সবাইকে স্বাগত জানান। করোনাকালে বিশেষ ব্যবস্থায় অধিবেশন পরিচালনার কথা জানান। বাজেট অধিবেশন অতি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সব স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে, মাস্ক ও গ্লাভস পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ অধিবেশন চলবে। অধিবেশনের সব সদস্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে বাজেট অধিবেশনকে কার্যকর ও সক্রিয় করে তুলবেন।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে অনুষ্ঠেয় বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সংসদ। সংসদ সচিবালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে অন্যদের সংসদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সংসদ ভবনে দর্শনার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী- এসএসএফের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদ অধিবেশনে কাজ করবেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে ৪৩ জনের। শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া এমপিদেরও অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
অধিবেশন চলাকালে কক্ষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায়ও বড় ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাময়িকভাবে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীকে আরও এক সারি পিছনে এবং প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশের আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের আরো কয়েক আসন দূরে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পাশেই সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বয়স বিবেচনায় অধিবেশনে যোগ দেননি।
প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জন সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত প্রথম দিনেই অনুসরণ করা হয়েছে।
প্রথম দিনের অধিবেশনে সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মনোনয়নের পরপরই আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তিনটি অধ্যাদেশ উপস্থাপন করেন। অধ্যাদেশগুলো হলো- আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২০ এবং আয়কর সংশোধন (অধ্যাদেশ) ২০২০। এর পরপরই স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। চলতি সংসদের সদস্য (ঢাকা -৫) হাবিবুর রহমান মোল্লাসহ বিগত সপ্তম অধিবেশন থেকে এ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং যত বিশিষ্টজনেরা মারা গেছেন তাদের জন্য শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় দেশে-বিদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিবর্গের জন্যও।