তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান এর ৫১তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে ধলই সীমান্তে তাঁর স্মৃতিসৌধে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করা হয়।
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান(২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ – ২৮ অক্টোবর ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
অন্তর্জালে খোঁজ নিয়ে যতদূর জানা গেছে, ১৯৭০ সালে হামিদুর যোগ দেন সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে৷ তাঁর প্রথম ও শেষ ইউনিট ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট৷ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে চাকরিস্থল থেকে বাড়ী ফিরে যান হামিদুর। বাড়ীতে একদিন থেকে পরদিনই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য চলে যান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে। এটি ছিল যুদ্ধের ৪নং সেক্টরের একটি এলাকা। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন।
দিনটি ছিল অক্টোবরের ২৮ তারিখ। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌছে গেলে অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলা করবে। সেই গ্রেনেড ইটা মারার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে। হামিদের হাতবোমা সফলতার সাথে দু’টি মেশিনগান চৌকিতে মারাত্মক আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এ সময়ই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। এ অবস্থায়ই তিনি মেশিনগান পোষ্টের কাছে গিয়ে দুই পাকিস্তানি সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধে লিপ্ত হন। এর মাধ্যমে হামিদুর রহমান একটি মেশিনগান চৌকিকে অক্ষম করে দিতে সক্ষম হন। তার এই অদম্য সাহসিকতার সুযোগে বাকী মুক্তিযোদ্ধাগন এগিয়ে যান এবং শত্রু সীমানা ফাঁড়িখানা দখলে নিয়ে নেন।
ফাঁড়ি দখলের পর মুক্তিযোদ্ধাগন হামিদুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নিচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ২০০৭ সালের ১০ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকাস্থ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।