এক-দু বছর নয়। বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় পেতে দীর্ঘ ১৫ বছর অপেক্ষা করেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেই অপেক্ষার অবসান হলো। নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।
সবশেষ ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জিতেছিল বাংলাদেশ। এতদিন ৯ পর্যন্ত সেটিই ছিল মূল পর্বে তাদের একমাত্র জয়। দেড় দশকের দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ সোমবার নেদারল্যান্ডসকে রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক তাসকিন।
হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে ব্যাটিংটা মন মতো হয়নি বাংলাদেশের। অল্পতেই থেমে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের সামনে। কিন্তু বোলিংটা হয়েছে দুর্দান্ত। তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় সাকিব আল হাসানের দল।
আজ সোমবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান করেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেছেন আফিফ হোসেন।
জবাব দিতে নেমে ১৩৫ রানে থেমেছে নেদারল্যান্ডস। ছোট সংগ্রহ নিয়েও লড়াইটা জমিয়ে তোলেন বাংলাদেশের বোলাররা। যার শুরুটা করেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের প্রথম দুই বলে তুলে নেন দুই উইকেট। রানের খাতা খোলার আগেই জোড়া উইকেট হারিয়ে ফেলে ডাচরা।
এরপর সাকিবের ওভারে কাটা পড়েন আরও দুজন। অবশ্য তারা ফেরেন রানআউটে। ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস। সেখান থেকে উদ্ধার করতে প্রতিরোধ গড়েন স্কট অ্যাডওয়ার্ডস ও কলিন একারমান। দুজন মিলে পঞ্চম জুটিতে তোলেন ৪৪ রান।
১২তম ওভারে স্কটকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। ১৬ রান করে ফেরেন ডাচ অধিনায়ক। এরপর নামা টিম প্রিঙ্গলকে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ। ডাচরা ৬ উইকেট হারানোর পরই বৃষ্টি নামে হোবার্টে। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর ফের ম্যাচ গড়ালে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় সাকিব আল হাসানের দল।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১৫ রান খরচায় দুটি উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। সমান ওভার করে ২৫ রান দিয়ে তাসকিনের শিকারও চারটি। এটিই এই ফরম্যাটে তাসকিনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। আগের সেরা ছিল ১২ রানে দুই উইকেট।
এর আগে টসের জয়ের সুবিধা লুফে নেয় নেদারল্যান্ডস। বৃষ্টিসিগ্ধ আবহাওয়ায় বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় তারা। এরপর চেপে ধরে বোলিং দিয়ে।
যদিও ইনিংসের শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটিতে ৪৭ রান করেন শান্ত ও সৌম্য। এই জুটি ভাঙলেই এলোমেলো হয়ে যায় সব। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সৌম্যর বিদায়ে জুটি ভাঙে। পল ফন মিকেরেনের শর্ট বলে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার। ১৪ বলে দুই চারে ১৪ রান করেন সৌম্য।
পরের ওভারের প্রথম বলে ফেরেন শান্ত। বাঁহাতি স্পিনার টিম প্রিঙ্গলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে তিনিও ক্যাচ দেন মিডউইকেটে। ২০ বলে ২৫ রান করেন শান্ত।
এরপর উইকেটে এলেন আর গেলেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। ফন বিকের শর্ট অব লেংথ বলে কাটা পড়েন লিটন (৯)। এরপর সাজঘরের পথে হাঁটেন সাকিব(৭)। হাল ধরতে পারেননি ইয়াসিরও। তিনি বোল্ড হয়ে ফেরেন ৩ রানে।
৭৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর চরম চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে উদ্ধার করতে জুটি বাধেন আফিফ ও সোহান। এই জুটিতে ৪৪ রান করেন দুজন। আফিফ ফিরে যান ৩৮ রানে আর সোহান ফেরেন ১৩ রানে। দ্রুত উইকেট হারানোর মিছিলে শেষ পর্যন্ত কোনো মতে ১৪৪ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৪৪/৮ (শান্ত ২৫, সৌম্য ১৪, লিটন ৯, সাকিব ৭, আফিফ ৩৮, ইয়াসির ৩, সোহান ১৩, মোসাদ্দেক ২০*, তাসকিন ০, হাসান ০*; ক্লাসেন ৪-০-৩৩-১, আকারম্যান ১-০-৪-০, ফন মেকেরেন ৪-০-২১-২, ডে লেডে ৩-০-২৯-২, প্রিঙ্গল ২-০-১০-১, শারিজ ৩-০-২৭-১, ফন বিক ৩-০-১২-১)।
নেদারল্যান্ডস : ২০ ওভারে ১৩৫ (স্কট ১৬, ম্যাক্স ও’ডাউড ৮, বিক্রমজিং সিং ০, বাস ডি লিড ০, কুপার ০, একারমান ৬২, প্রিঙ্গল ১, বিক ২, ক্লাসেন ৭, মিকেরেন ২৪ ; তাসকিন ৪-০-২৫-৪, হাসান ৪-১-১৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০১৯-০৯, সাকিব ৪-০-৩২-১, সৌম্য ৩-০-২৯-১)।
ফল : ৯ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
সুত্রঃ এনটিভি