ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও চীনে প্রলম্বিত লকডাউনের অভিঘাত পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপে মাথায় হাত অগ্রসর থেকে উদীয়মান অর্থনীতির। তবে এ অবস্থার মধ্যেও গত আগস্টে সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) তেল বহির্ভূত ব্যবসায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গিয়েছে। এ সময়ে নতুন নতুন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুলাইয়ে সউদী আরবে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স (পিএমআই) ছিল ৫৬ দশমিক ৩ পয়েন্টে। আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৭ পয়েন্ট, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। কারণ হিসেবে গত ১০ মাসের মধ্যে নতুন ব্যবসার উচ্চ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওয়েন বলেন, গত আগস্টে সউদী আরবের পিএমআই তেলবহির্ভ‚ত অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এনেছিল। কারণ ব্যবসায়িক কর্মকাÐ ও বিক্রির পরিমাণ ভালো হচ্ছিল। যদিও বিশ্বে অর্থনৈতিক ধীরগতি রয়েছে। তবে তার তেমন প্রভাব এ খাতে পড়েনি। নতুন ক্রয়াদেশের পরিমাণ বেড়েছে গত অক্টোবরের পর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। আর এক্ষেত্রে গতি এনেছে ভোক্তা চাহিদা, উচ্চ রফতানি ও মহামারির পর অর্থনীতিতে বড় পুনরুদ্ধার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের কারণে ব্যবসাগুলোর উপকার হয়েছে। যার কারণে সেগুলোয় গতি বেড়েছে। বিশেষ করে ইনপুট প্রাইস প্রেসার কিছুটা কমানোর কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আউটপুট চার্জ কমাতে পেরেছে, যা বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়েছে। নতুন ক্রয়াদেশ, কর্মসংস্থানসহ সবকিছু মিলিয়ে বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। সব মিলিয়ে এক মাস আগের অবস্থার তুলনায় তেলবহির্ভ‚ত খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ব্যবসার প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এ প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। নতুন ক্রয়াদেশের যে আকার সর্বশেষ দেখা গিয়েছে তাকে সহযোগিতা করেছে শক্তিশালী রফতানি। খাতভিত্তিক হিসেবে খুচরা ও পাইকারি উভয় খাতেই নতুন কর্মসংস্থান বেড়েছে। উৎপাদন, নির্মাণ ও পরিষেবা খাতেও কাজের ব্যাপকতা বেড়েছে। টানা পঞ্চম মাসের মতো কর্মসংস্থানও বেড়েছে রাজ্যটিতে। ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সউদী আরবের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে বার্ষিক তেলভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐ বেড়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।
অন্যদিকে তেলবহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বছর বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে সউদী আরব। কারণ গত এক দশকে এবারই সবচেয়ে দ্রæত এগিয়েছে দেশটির অর্থনীতি। গত আগস্টে এসব কথা জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, চলতি বছর দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২১ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও ব্যবসাসংক্রান্ত জরিপগুলো বলছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আগস্টে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা ছিল। হাইড্রোকার্বনের দাম, ইউরোপের জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া ও রাশিয়ার গ্যাসের সরবরাহ সংকট অর্থনীতিকে বেশ বিপদেই ফেলেছিল। দ্য ন্যাশনাল।