তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান-১০০টি গাছের চারা রোপন অন্যান্য শর্তে, অভিযুক্তদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন। সোমবার ৮ আগস্ট দুপুর টায় এক ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক মানবিক রায় প্রদান করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ জেলার জুড়ী থানাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সামনে মারামারির ঘটনা কেন্দ্র করে চন্দন কুমার দাস বাদী হয়ে কবির আহমদ, ও মুহিবুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামী করে জি. আর ২৬/২০১৫(জুড়ী) মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩২৩ ধারার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। পরে অভিযুক্তদের জীবনে প্রথমবারের মতো অপরাধ বিবেচনায় ও তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুরুতর না হওয়ায় এবং আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রায় ৭ বছর নিয়মিত হাজিরা দেয়ার কারণে আদালত তাদেরকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ প্রদান-কল্পে “প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের ১৯৬০” অধীনে ১০০টি গাছ রোপন, নতুন করে কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, শান্তি রক্ষা ও সদাচরণ করা, আদালতের নির্দেশমতো হাজির হওয়া ইত্যাদি শর্তে মুক্তি দেন আদালত। এই শর্তগুলো প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন। মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক পি পি এ. এস. এম. আজাদুর রহমান বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী কারাগারে আবদ্ধ কক্ষে নয়, মুক্ত বাতাসে পরিবার পরিজনের সান্নিধ্য পাবেন যা অভিযুক্তদের সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাবলিক প্রসিকিউটর রাধাপদ দেব সজল বলেন, অধ্যাদেশটি অনেক পুরানো হলেও প্রয়োগ ছিল না উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার আলোকে মৌলভীবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে এর দৃশ্যমান প্রয়োগ শুরু হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদরুল হোসেন ইকবাল বলেন, প্রথম ও লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন। আদালত উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, লঘুদণ্ডে অনেকেই কারাগারে গিয়ে আসামীর সংস্পর্শে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে।
প্রবেশনের ফলে নিজেকে সংশোধন ও অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে অভিযুক্তরা উৎসাহী হবে। দেশের কারাগার-গুলোয় প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসামী রাখা হচ্ছে। প্রবেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লঘু শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধীরা সমাজের মূলস্রোত ধারায় ফিরে আসবে ও কারাগারগুলো মাত্রাতিরিক্ত কয়েদী হতে ভারমুক্ত হবে। এতে করে সমাজের রুপরেখা বদলানো ও অপরাধ মুলক মনোনয়ন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে।