শার্শা প্রতিনিধি: যশোরের শার্শা উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়ানের গোড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনটি পদের বিপরিতে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের দাবি, অফিস সহায়ক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও আয়া পদে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যটি স্কুল কমিটির সভাপতি বাটুল এবং নিজামপুর ইউনিয়ান পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাপ্পির তত্ত্বাবধায়নে সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে নিয়োগ বোর্ড দাবি করেছে, কোন প্রকার নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি। সঠিক প্রক্রিয়ায় তিনটি পদেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
স্কুল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গোড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক, কম্পিউটার অপারেটর, আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে লোকবল নিয়োগের জন্য পত্রিকার মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন আহ্বান করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে উল্লেখিত পদের বিপরীতে ১৯ জন আবেদন করেন। যার লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হয় ২৫ই মে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্নের আগেই নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিকে নিয়োগের জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন ইউনিয়ান পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাপ্পি।
এমনকি তারা নিজের মতো করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পরীক্ষার কয়েকদিন আগে থেকে কয়েক দফায় গোপন মিটিং সম্পন্ন করেন। মিটিংয়ে চারটি পদে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কমিটির চার জন পছন্দের ব্যাক্তি সিলেক্ট করা হয়। তবে সবশেষে একটি পদের নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। বাকি তিনটি পদে ২০ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, নিয়ম বহির্ভূত এই নিয়োগ বাণিজ্যে আয়া পদে নিয়োগ শারমিন আক্তার, অফিস সহায়ক পদে ইকরামুল হোসেন ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটার পদে প্রসনজিৎ পাল।
এদিকে, সঠিকভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে, অর্থের বিনিময়ে তিনটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করায় ক্ষুব্ধ চাকুরী প্রত্যাশী বাকি ১২ আবেদনকারী।
ইউনিয়ান থেকে কম্পিউটার অপারেটার পদে আবেদনকারী মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে নামমাত্র। পরীক্ষার আগেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলো। নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ২৫ই মে যশোর জেলা স্কুলে এই পদের জন্য লিখিত, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার কথা থাকলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা বাদেই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। কেননা তাদের মনোনীত প্রার্থী কম্পিউটার চালানো সম্পর্কে দক্ষতা না থাকায় তারা ব্যবহারিক পরীক্ষাটি বাদ দিয়ে দেন। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তারা টাকার জোড়ে চাকুরী পেয়ে গেলো আর আমরা বঞ্চিত হলাম। আমি এবিষয়টি তদন্তের জন্য আজই ডিসি বরাবর একটি আবেদন করবো। আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত পূর্বক এর সঠিক বিচার চাই।
গোড়পাড়া গ্রামের খোরশেদ হোসেন বলেন, স্কুলের সভাপতি আশরাফুল আলম বাটুল এবং আমি একসাথে রাজনীতি করতাম এবার ইউপি নির্বাচনে তার হয়ে আমি ভোটও করেছি। সেই সুবাদে বাটুল ভাই আমাকে বলে এখনতো আর শুধু যোগ্যতায় চাকুরী হয়না, কিছু ডোনেশন দিতে হয়। বোঝতো বিদ্যালয়ে অনেক উন্নয়নের কাজ থাকে। তুমি তোমার ভাইর জন্য ছয় লক্ষ টাকা দিয়ানি, তাইলে আমি ওকে সিলেক্ট করে দিবানি। সবশেষ তিনি নিজের মানুষ বলে পাঁচ লক্ষ টাকায় রাজী হন। তখন আমি তাকে অগ্রিম চার লক্ষ টাকা দিয়ে দেয় এবং কিছুদিন পরেই গাছ বিক্রি করে বাকি ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দিতে চাই কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে আমাকে কিছু না জানিয়ে আমার ছোট ভাইকে ডেকে টাকা গুলো ফেরত দিয়ে দেয় এবং আমাকে জানাতে মানা করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বেশি টাকার বিনিময়ে বাটুল অন্য জনকে সিলেক্ট করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিস সহায়ক পদের এক প্রার্থীর পিতা বলেন, পেপারে চোরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বের হলে ঐ সভাপতি বাটুল নিজে আমার বাড়িতে হাতে করে পেপার নিয়ে গিয়ে বলেছে ৫ লাখ টাকা দিলে আপনার ছেলের চাকরি হয়ে যাবে কিন্তু পরীক্ষার একদিন আগে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মাধ্যমে জানতে পারি বেশি টাকার বিনিময়ে চাকরিটা অন্য জনকে দিয়ে দেছে। এ পদে টাকা এবং ক্ষমতার জোড়ে সাবেক চেয়ারম্যান বাপ্পির প্রার্থী চাকরি পেয়েছে। এ পদে বাটুল কোন হস্তক্ষেপ করতে পারেনি, তার ভাগে পরেছিলো কম্পিউটারে পদের চাকরিটা। আর প্রধান শিক্ষক নিরাপত্তা প্রহরী পদে তার নিজের ভাগনেকে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার দুর্ভাগ্য তিনজন প্রার্থী না হওয়ায় ঐ পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম বাটুল বলেন, নিয়োগের সকল নিয়ম মেনেই এই পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমার উপর আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বাংলা পত্রিকাকে বলেন, আমাকে ম্যানেজিং কমিটি যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি। আমাদের মধ্যে লেনদেনের এমন কোন ঘটনা ঘটেনি তবে নিয়োগ নিয়ে বাইরে রাজনৈতিক নেতারা হয়ত কোন লেনদেন করলেও করতে পারে সেটা আমি শিউর না।
এবিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান বাপ্পীকে ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা সকল নিয়ম মেনে হয়েছে এখানে বাণিজ্যের কোন অভিযোগ পাইনি। কম্পিউটার অপারেটার পদে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও কেনো নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি তখন নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম নেওয়া হয়েছিলো কিনা আমি এটা জানিনা। আমি জেনে আপনাকে জানাবো।