হংকংকে কেন্দ্র করে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। বৃহস্পতিবার হংকং বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুমোদন দিয়েছে চীনের পার্লামেন্ট। এর বিরুদ্ধে যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবরোধ দেয় তাহলে তা হবে ‘উভয় দিকে ধারালো তলোয়ারের’ মতো বলে হংকং সরকার উল্লেখ করেছে। তাদের যুক্তি এতে হংকংয়ের ক্ষতি হবে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বাণিজ্যিক ক্ষতি হবে। শুক্রবার দিনশেষে এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান পরিষ্কার করার কথা। তবে আগেভাগেই চীন তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ওদিকে চীনের পার্লামেন্টে আইন অনুমোদন হওয়ার পরের দিন আজ শুক্রবার এই আইনের প্রতি সমর্থন দিতে হংকংবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম। তিনি চীনপন্থি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
হংকং চীনের অধীনে হলেও তারা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এই নতুন আইনের ফলে তাদের সেই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’র অধীনে সাবেক বৃটিশ ঔপনিবেশ হংকং উচ্চ মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। অর্ধ শতাব্দীরও আগে এই ভূখন্ড ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসে। সেখানে যদি চীনের গৃহীত পদক্ষেপের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দেয় তাতে শুধু হংকংয়ের ক্ষতি হবে এমন নয়। ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রেরও। হংকং সরকার বলেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে হংকংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ছাড়িয়ে গেছে ২৯৭০০ কোটি ডলার। এই শহরে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩০০ ফার্ম। এখানে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ফলে অবরোধ দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যিক স্বার্থ নষ্ট হবে।
নতুন আইনের অধীনে হংকংয়ের ভিতরে চীনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে। বেইজিংয়ের যুক্তি হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাস ও বিদেশী হস্তক্ষেপ মোকাবিলার জন্য এই নতুন আইন অত্যাবশ্যক। সম্প্রতি হংকং সরকার হংক থেকে প্রত্যাবর্তন বিষয়ক একটি আইন করার উদ্যোগ নেয়। এর অধীনে কোনো সন্দেহভাজনকে চীনের হাতে তুলে দেয়ার কথা বলা হয়। এই প্রস্তাব উত্থাপনের সময় থেকেই আন্দোলনে আন্দোলনে প্রকম্পিত হয়।
বিক্ষোভে কাঁপতে থাকে শহরটি। ফলে বাধ্য হয়ে ক্যারি লামের সরকার ওই পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ বন্ধ হয় নি বলে গণতন্ত্রপন্থিরা সব সময় সজাগ। তাই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরে জাতীয় নিরাপত্তা আইন কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবার হংকংয়ে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভ হয়েছে। তাদের ওপর মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করেছে কয়েক শত মানুষকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখানো হয়েছে এর বেশির ভাগই যুব শ্রেণির। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলপড়–য়া। তাদেরকে তুলে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়েছে।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুদলো সতর্ক করেছেন এই বলে যে, হংকংয়ের সঙ্গে এখন বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ে চীনের মতো আচরণ করতে হবে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন এখন আর নেই।