দেশে নিয়মিত দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি চলতে থাকলে নীরব দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ পণ্যের অভাবে হয় না। পণ্য কেনার সামর্থ্যের অভাবে হয়। যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে কিন্তু মানুষের আয় কমছে। এভাবে নিয়মিত জিনিসপত্রের দাম যদি বাড়তে থাকে তাহলে বাজারভর্তি জিনিস থাকার পরও মানুষের না খেয়ে থাকতে হবে। এ জন্য দুর্ভিক্ষ হতে পারে। মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এসডিসি) ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি নেই’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এ সময় জিএম কাদের বলেন, দেশে আয় বাড়ানো সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা খুব কম।
বেশির ভাগ মানুষের আয় বাড়েনি। অনেকের কমে গেছে। কারও আবার চাকরি চলে গেছে। বেকারত্ব আগের চেয়ে বাড়ছে। ধনীরা প্রতিদিন ধনী হচ্ছে কিন্তু গরিবরা প্রতিদিন আরও গরিব হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদিও আমাদের পার ক্যাপিটাল ইনকাম বাড়ছে কিন্তু এটার সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। জিডিপি বাড়লেও সে হিসাবে একটা পরিবারের আয় বাড়ছে না। চাকরিজীবীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এসব দিক চিন্তা করলে নীরব দুর্ভিক্ষের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। ইউক্রেনের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের বাজারে এর বড় প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলো। এতে গমের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তেলের দাম বেড়েছে। সরকার যদি মানুষকে বাঁচাতে চায় তাহলে কোনো না কোনো পথ নিতে হবে। অন্য জায়গা থেকে খরচ কমিয়ে এনে এখানে মানুষকে ভর্তুকি দিতে হবে। এখনো সময় আছে। যুদ্ধ বেশিদিন চলেনি। যুদ্ধ সামনে এভাবে চলতে থাকলে এক সময় মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যেতে পারে। দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেলে, মানুষ মরতে শুরু করলে কিছু করার থাকবে না। তখন সরকার চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবে না। এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যদি সরকার কোনোভাবেই সমন্বয় করতে না পারে তাহলে অন্য ফান্ড থেকে হলেও ফান্ডিং করে এটাকে ঠিক করা দরকার।
তিনি বলেন, আমি টিসিবিতে যখন তাকাই তখন দেখি লাইনগুলো প্রতিদিন বাড়ছে। তার মানে সেখানে দুস্থ লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। আমাদের টিসিবি রাখা হয়েছে মূলত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর একটা অংশ হিসেবে। অর্থাৎ আমরা কম দামে কিছু গরিব লোককে পণ্য দিবো। এটার সঙ্গে মার্কেটের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা দিয়ে যদি মার্কেট বিপর্যয় হয়ে যায় তাহলে তা আমাদের জন্য অনেক খারাপ জিনিস হবে। তাই আমরা চাচ্ছিলাম যারা দুস্থ, বস্তিবাসী, রাস্তাঘাটে ঘুমায় তারাই শুধু টিসিবি’র পণ্য নিবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তরাও টিসিবি থেকে পণ্য নিচ্ছে। টিসিবি দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীটা সম্পূর্ণভাবে কাভার করা সম্ভব হবে না। রেশনিং সিস্টেম ছিল আগে। দুই, তিন ক্যাটাগরিতে জনগণকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে যদি কার্ড দেয়া যায় এবং তার মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করা যায় তাহলে এক্ষেত্রে একটা ভালো ফল পাওয়ার সুযোগ থাকে। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’কে হারিয়ে বিজয়ী হয় প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা।