
অনলাইন ডেস্কঃ চলতি মাসে আরও দুটি উড়োজাহাজের মালিকানা পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতদিন ইজারা নিয়ে চালানো এ দুটি বিমান গত মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে কিনে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি। এতে বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮টি। এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পাওনা ২৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিমান। বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকেও বকেয়া ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে নগদ মূল্যে জ্বালানি কিনছে বিমান। বিমানের আয়ের প্রধান উৎস হজ ফ্লাইট। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে হজ ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লাভের মুখ দেখছে বিমান; করোনার মধ্যেই মুনাফা করেছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা বিমানের ৫০ বছরের যাত্রায় সব কিছুতেই উন্নয়নে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনায় এসব সম্ভব হয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বিমান পরিচালনা পর্ষদ বোর্ড এবং বিমান
প্রশাসন বিভাগের দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো বিমানের নিজস্ব জনবল দিয়ে ৭৭৭ অত্যাধুনিক বোয়িংয়ের মতো উড়োজাহাজের গিয়ার স্থাপনসহ সার্ভিসিং করা হয়েছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন উড়োজাহাজও সার্ভিসিং করেন বিমানের দক্ষ কর্মীরা। এতে একদিকে যেমন বিমানের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব আয়ও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও তার দেওয়া এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা কাজে লাগিয়ে তা থেকে ৪০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। বিমানের প্রশাসন বিভাগের দক্ষ জনবল এ আয় করে।
করোনা মহামারির শুরু থেকেই যাত্রীসেবার পাশাপাশি জাতিসংঘ ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। জনসাধারণের জন্য সরকারের কেনা করোনার টিকাও বিদেশ থেকে স্বল্প খরচে পরিবহন করা হয়েছে। সাধারণত বিশ্বে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলোর ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ মালিকানা থাকে ওই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের। এ ক্ষেত্রে ৮৭ শতাংশ মালিকানা রয়েছে বিমানের। বিমানে যাত্রীসেবা, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজের মান বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিমান কর্মকর্তারা জানান, বিমানে প্রায় এক যুগের বেশি সময় লিজে পরিচালনা করা হয় ৫টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে দুটি উড়োজাহাজ গত মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে কিনে নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার জানান, বর্তমান বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি লিজ নেওয়া। এসব বিমানের মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৪, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং পাঁচটি ডিসি ৮-৪০০। বর্তমান ১৯টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চালাচ্ছে বিমান; এর বেশিরভাগই স্বল্প বা মাঝারি দূরত্বের। এ ছাড়া দেশের ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত চলছে বিমানের ফ্লাইট।
বিমান কর্মকর্তারা আরও জানান, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় পতাকাবাহী এ বিমান সংস্থা বেশিরভাগ অর্থবছরে লোকসান করেছে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি টাকা মুনাফা (ডিসেম্বর ২০২০ অনুযায়ী) করেছে বিমান। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিমানের লোকসান হয়েছে ৮১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
(দৈনিক সমকাল)