
কক্সবাজারের উখিয়ার ১৬ নম্বর শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ৬ শতাধিক বসতবাড়ি, লার্নিং সেন্টার, শিশু পার্কসহ নানা ঝুপড়ি প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে আনুমানিক ৪ হাজার রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় ১৪টি পরিবার। রোববার বিকালে গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত।
দ্রুত রোহিঙ্গাদের শেল্টার নির্মাণ করে দেওয়াসহ সমস্যা লাঘবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত। তিনি বলেন, বারবার আগুন লাগার কারণ জানতে ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে অতিরিক্ত প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান, ৮ এবিপিএন, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও সিআইসিকে সদস্য হিসাবে রেখে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের পর ক্ষতিগ্রস্ত বসতি ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
৮ নম্বর এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান জানিয়েছেন, শফিউল্লাহ কাটা পুলিশ ক্যাম্প-১৬ এর আওতাধীন এফডিএমএন ক্যাম্প-১৬ এর ব্লক বি-১ এর রোহিঙ্গা ইলিয়াস মাঝি এবং আবুল সৈয়দ মাঝির ঘরে রান্না করার সময় চুলার আগুন বেড়ায় লেগে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তিনি জানান, আগুনের লেলিহান শিখায় থাকার ঘর, ফায়ার ড্রাম, ওয়াটার ট্যাংক, কিচেন আইটেম, গ্যাস সিলিন্ডার, ফ্লোর ম্যাট, লার্নিং সেন্টার, শিশু পার্কসহ ৬০০ শতাধিক স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক অর্ধশত কোটি টাকার অধিক পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগুনে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা ও ডজনাধিক স্থানীয় বাসিন্দার ঘর পুড়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে ভাঙা হয়েছে আনুমানিক শতাধিক ঘর। ব্লক বি-১, ব্লক বি-২, ব্লক বি-৩ ও সি-৩ ক্যাম্পে এ ঘরগুলোর ক্ষতি হয়। ভুক্তভোগীদের ক্যাম্প-১৬-এর অন্তর্ভুক্ত সব লার্নিং সেন্টার, মাদ্রাসা ও মক্তব, ওমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস, আত্মীয়স্বজন এবং পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের রাতে শুকনো খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, রিক। সকালে খাবার সরবরাহ দিয়েছে এনজিও সংস্থা এমএসআই। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা নিবাসের পাশাপাশি পুড়েছে স্থানীয় ডজনের বেশি বসতিও। একে তো প্রচণ্ড শীত পড়ছে। তার ওপর বসতি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় পরিবারগুলোর। শীতের কাপড়, খাদ্য ও পানি সংকটে চরম কষ্টে রয়েছেন তারা।
আইওএমের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তা ঠিক করার পর সমন্বয় করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তারেক।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ১৪টি স্থানীয়দের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদেরকে এনজিও থেকে যেমন সহযোগিতা করা হবে পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দও দেওয়া হবে।