হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহুমুখী সংকটে পড়তে হচ্ছে প্রবাসীদের। দেশ ছাড়তে গিয়ে বিমানবন্দরে অসহায় অবস্থা তাদের। রাতে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার কারণে সারাদিন ফ্লাইট জট, নিম্নমানের খাবার, নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা স্বজনদের হয়রানি, পিসিআর ল্যাবে ও ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদেশযাত্রীদের। সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে তা হচ্ছে- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই ও কাতারে যাওয়া প্রবাসীরা পেটের পীড়াসহ নানামুখী শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিমানবন্দরে এসে নিম্নমানের খাবার খেয়ে তারা এ সমস্যায় পড়ছেন। এতে দেশের শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশেপাশে কোনো মানসম্মত খাবার হোটেল নেই। যেগুলো আছে সেগুলো সর্বত্র নোংরা আর অব্যবস্থাপনায় ভরা।
যে ক’টি ভালো আছে সেগুলোর খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। অধিক মূল্য হওয়ার কারণে সেগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে যাওয়া শ্রমিকরা খেতে যান না। তারা আশেপাশের নিম্নমানের হোটেলের খাবার খান। এ কারণে ওই খাবার খেয়ে অনেক শ্রমিকের পেটের পীড়ার সমস্যা হচ্ছে। কারও কারও কলেরা ও ডায়রিয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দর এলাকায় খাবারের দাম অনেক হওয়ার কারণে কোনো কোনো প্রবাসী গ্রামের বাড়ি থেকে টিফিন বক্সে করে খাবার নিয়ে আসছেন বিমানবন্দরে। দীর্ঘক্ষণ ওই খাবার থাকার কারণে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওই খাবার খেয়েও অসুস্থ হচ্ছেন তারা। কাতার ও দুবাইয়ে ১৮০ জন শ্রমিক এ সমস্যায় পড়েছেন। বিষয়টি খুব জটিল হিসেবে নিয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ। কর্র্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দরের সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য হোটেল গড়ে ওঠেনি। এ কারণে তারা বাইরে খাচ্ছেন। এ সমস্যাটি দ্রুত কীভাবে সমাধান করা যায় তা তারা ভেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ জানান, ‘খাবারের বিষয়ে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গতকাল দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে শত শত যাত্রীর ভিড় ও লম্বা লাইন। রাতে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা আরও বেড়েছে। করোনার জন্য প্রায় ৬ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে আসতে হয় যাত্রীদের। আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের আসতে হয় অন্তত ৮ ঘণ্টা আগেই। এ সময় তারা বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকেন। কেউ বিমানবন্দর ও এবং আশেপাশের দোকান ও ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খান। কেউ কেউ খাবার খান না। দীর্ঘ সময় খাবার না খাওয়া এবং কেউ কেউ নিম্নমানের খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পড়ছেন নানারকম শারীরিক জটিলতায়। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, নিম্নমানের কোনো খাবার বিমানবন্দরের ভেতরে বিক্রি হচ্ছে না। বিমানবন্দরে ভালোমানের খাবার বিক্রি করা হয় এবং তা দেখভাল করে কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিংয়ের দোতলায় ৪টি খাবারের দোকান আছে। সেগুলোতে ভালোমানের খাবার বিক্রি করা হয়। শ্রমিকরা বাইরে থেকে নিম্নমানের খাবার এনে খাওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
টার্মিনাল ২-এর সামনের নিচে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে খোলা আকাশের নিচে খাচ্ছিলেন সুমন নামে এক যুবক। তিনি জানান, তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সে করে দুবাই যাবেন। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা এলাকায়। রাতে তার ফ্লাইট ছিল। তিনি আরও জানান, বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের কাছে একটি হোটেলে গিয়ে দেখি খাবারের দাম অনেক। এরপর ১০০ টাকা দিয়ে ওভার ব্রিজ পার হয়ে একটি ছোট হোটেল থেকে খাবার কিনেছেন তিনি।
শরিফ নামে আরেক প্রবাসী জানান, বিমানবন্দরের হোটেলগুলোতে অনেক দাম। পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকে না। তিনি বাসা থেকে একটি বক্সে করে খাবার নিয়ে এসেছেন। তিনি আরও জানান, টার্মিনাল-২ নিচতলায় টিফিন বক্স খুলে খেতে গেলে সেখানে নিরাপত্তা রক্ষীরা বাধা দিয়েছেন। পরে তিনি গাড়ি পাকিংয়ের স্থানে খেতে বসেছেন।
তিনি আরও জানান, ১ দিন আগে তিনি তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে বিমানবন্দরে এসেছেন। তার গন্তব্য সৌদি আরব বলে জানালেন।
আব্দুর রহমান নামে আরেক যাত্রী জানান, ডমেস্টিক রুটে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন। এয়ার ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় তাদের ফ্লাইট ২ ঘণ্টা লেট করেছে। রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে দিনে রানওয়ে ফ্রি ছিল না বলে তাকে বিমানের কর্মীরা জানিয়েছেন।
উৎসঃ দৈনিক মানবজমিন