অটিজম শিশুর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অটিজম এর কোনো প্রতিকার আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের অজানা। যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ (৭৭ মিলিয়ন) মানুষ অটিস্টিক। বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জরিপে দেশে প্রায় ১৬ লাখ ৪৪ হাজার জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার।
আশার কথা যেখানে কোন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজও অপারগ, সেখান এই দুরারোগ্য সেপকট্রাম এর কিছু উজ্জল সাফল্যের কথা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাইছি। সেটা সম্ভব করছেন একজন প্রবাসী বাংগালির গবেষনা কেন্দ্রীক ন্যাচারাল ও হোমিওপাথিক চিকিৎসক। কানাডার নিবন্ধিত এই হোমিওপ্যাথ এবং অটিজম গভেষক (শুধুমাত্র অটিজমের চিকিৎসা করেন) চিকিৎসা এবং উন্নতি সম্পর্কে জানিয়েছেন।
চিকিৎসকের জাহাঙ্গীরের মতে, অটিজম একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা যা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও পরিবর্ধন জনিত অস্বাভাবিকতার ফলে হয়। অটিস্টিক হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা অটিজম আক্রান্ত মানুষ রয়েছেন। ১৯৪৩ সালে আমেরিকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার প্রথম মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে রোগটি শনাক্ত করে অটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন। শিশুর জন্মের প্রথম দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।
তিনি বলেন, অটিজমে আক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে অসুবিধা হয়। অটিজমের কারণে কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ও আচরণে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়।
অটিজম শিশুটি সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না। কথা বলতে না পারা বা কিছু বলতে পারা অথবা গুছিয়ে না বলা ও আচরণে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেলে সে অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। এসব শিশুরা প্রায়ই অসুখ-বিসুখের মধ্যে থাকে। ভালো-মন্দ আচ করতে না পারে না।
অটিজমের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। পরিবেশগত ও বংশগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। অনেক চিকিত্সকদের মতে, ভাইরাল ইনফেকশন, গর্ভকালীন জটিলতা এবং বায়ু দূষণকারী উপাদানসমূহ স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন জীনের কারণে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হতে পারে। আবার কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে জেনেটিক ডিজঅর্ডার যেমন- রেট সিন্ড্রোম বা ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোমের সাথে এই রোগটি হতে পারে। কিছু জীন মস্তিষ্কের কোষসমূহের পরিবহন ব্যবস্থায় বাধা প্রদান করে এবং রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। জেনেটিক বা জীনগত সমস্যা বংশগতও হতে পারে আবার নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই এই রোগটি হতে পারে। ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধকের সাথে অটিজমের কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
অটিজম এর চিকিত্সাঃ
কোনও শিশু অটিজমে আক্রান্ত মনে হলে অনতিবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের বা হোমিওপ্যাথি রেজিস্টার্ড অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে অটিজম এর ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক সফলভাবে মোকাবেলা করা যায়। শিশুর কি ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হোমিওপ্যাথি মতে রোগীলিপি তৈরি করে নির্দিষ্ট হোমিওপ্যাথি মাযাজম নির্ধারণ করে শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ নির্ণয় করে সুনির্বাচিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগে চিকিত্সা করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
এই ধরনের শিশুদের জন্য প্রচুর বিশেষায়িত স্কুল আছে, সেখানে তাদের বিশেষভাবে পাঠদান করা হয়। এ ধরনের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্টের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেবেন, কোন ধরনের স্কুল আপনার শিশুর জন্য উপযুক্ত হবে।
অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা যেমন- অতিরিক্ত চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেক সময় এরকম ক্ষেত্রে, চিকিত্সক শিশুটিকে ঔষধ দিতে পারেন। এ বিষয়ে অসংখ্য লক্ষণ ভিত্তিক হোমিওপ্যাথি ঔষধ আছে।
নিবিড় ব্যবহারিক পরিচর্যা, স্কুল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রয়োজনে সঠিক ওষুধের ব্যবহার একটি শিশুর অটিজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেকখানি সহায়ক হয়। যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে এই পদ্ধতিতে ৫০ জন অটিজম শিশু অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়েছে।
অটিজম প্রতিরোধে করণীয় কি?
সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবারে কারো অটিজম অথবা কোন মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন-
বেশি বয়সে বাচ্চা না নেওয়া।
বাচ্চা নেয়ার আগে মাকে রুবেলা ভেকসিন দিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাওয়া যাবে না।
মায়ের ধূমপান, মদ্যপানের মত কোন অভ্যাস বা মাদকাসক্ত থাকলে বাচ্চা নেয়ার আগে অবশ্যই তা ছেড়ে দিতে হবে। সন্তান বা বাচ্চা নিতে পিতারও ভূমিকা রয়েছে, এজন্য পিতাকেও উত্তেজক মাদকদ্রব্য, মদ্যপান, মাদকাসক্ত এড়িয়ে চলা দরকার।
বাচ্চাকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
চিকিৎসকের গবেষণা ও অটিস্টিক শিশুর কল্যাণে ওয়েব সাইট ভিজিট করলে অনেক কিছুই জানা সম্ভব।
(অটিজম গবেষকের ওয়েব সাইট – http://autism-nsfaglobal.com/ )