বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ করোনা চিকিৎসায় নতুন সাফল্যের দাবি করেছেন এক বাংলাদেশি চিকিৎসক। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম।
তিনি দাবি করেন, তার একজন সহযোগী চিকিৎসককে নিয়ে প্রায় দেড় মাসের গবেষণায় করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় পেয়েছেন নতুন আশার আলো।
শনিবার (১৬ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যাপক ডা. তারেক আলম মেডিভয়েসকে বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল মেডিসিন ইভারমেকটিনের সিঙ্গল ডোজের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগে করেন। এতে বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফার্মাসিউটিক্যালস একটি স্টাডি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, এর মাধ্যমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস দূর হয়ে যাবে। দেশের বাজারে যেহেতু অনুমোদিত এই ওষুধ আছে। সে অনুযায়ী আমরা অন্য কাজে অনেকবার এগুলো ব্যবহার করেছি। ওই একই ডোজ আমরা করোনার রোগীদের প্রয়োগ করেছিলাম, যাদের উপসর্গ নাই কিংবা সামান্য আছে। তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে নমুনা পরীক্ষায় তাদের সবার নেগেটিভ আসে। পাশাপাশি করো শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। ৬০ জনের মধ্যে এটি প্রয়োগ করা হয়, সবার সমস্যা কমে গেছে।’
এ গবেষণাকে যথেষ্ট মনে করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা যথেষ্ট না। আমরা আরও স্টাডি করবো। আইসিডিডিআর’বি চার দিন পরে এ নিয়ে স্টাডি শুরু করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুরু করেছে। ঢাকা মেডিকেলেও শুরু হয়েছে। ওদের প্রচুর রোগী আছে। তারা সব ধরনের স্টাডি করতে পারবে, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমি সাফল্য পেয়েছি; তাই আমি জানাতে চাচ্ছি, এর ব্যবহারে অন্তত কিছু রোগী তো বাঁচুক।’
এ বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ডা. তারেক আলম বলেন, ‘অনেকে ফোন করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন আমি কি প্রটোকল দিয়েছি। ওরা কি প্রটোকল দিতে পারে? আইসিডিডিআর’বি আর বেক্সিমকো সমন্বিতভাবে এ ব্যাপারে কাজ করছে। তাদের কাছে একজন মার্কিন চিকিৎসক এসেছেন। হয় তো ওদের ডাটার সঙ্গে আমাদের ডাটার তুলনা হবে। যদিও প্রাথমিকভাবে তারা ডাটা দিতে চাচ্ছিল না।’
তিনি বলেন, ইতিবাচক ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ দুটি নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতে গবেষণা শুরু হয়েছে।
তবে বিষয়টি এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরও গবেষণা দরকার আছে। ওষুধগুলো খুবই সস্তা হওয়ায় আমরা এসব নিয়ে ভাবতে পারছি না। এখানে অনেক বিষয় জড়িত। সস্তা ওষুধ, মাত্র ত্রিশ টাকায় চিকিৎসা হয়ে যাবে। এটা তো হতে পারে না (হাসি)। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, গরিব দেশে করোনা রোগীদের জন্য এটা হলে খুবই ভালো হয়।’
অধ্যাপক তারেক আলম বলেন, ‘কার্যকারিতা দেখে রোগীরা যেন ওষুধ কিনে বাসা ভরে করে না ফেলে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেন এ ওষুধ না খায়। এই ওষুধটি প্রয়োজনীয়, এটি কাজ করে। তাই রোগীরা যেন প্রয়োজনের সময় পেতে পারে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এই ওষুধ দুটি এর আগেও সার্স মহামারির সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। আমি নিশ্চিত করেই বলছি, এই ওষুধ দুটির সম্মিলিত ব্যবহারে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য দুটি ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও রেমডিসিভিরের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।’
এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগী হলে দেশের খুব উপকার হবে। এটি তাদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
প্রসঙ্গত, সম্মান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই গবেষণায় অধ্যাপক ডা. তারেক আলমের সঙ্গে সহযোগিতায় ছিলেন একই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ডা. রুবাইয়ুল মোরশেদসহ অন্যরা।