শতাধিক জীবন বাঁচিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউমের মরদেহ আগামী ২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে দেশে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এরইমধ্যে মরদেহ আনার সকল প্রস্তুতি শুরু করেছে বিমান।
বর্তমানে ক্যাপ্টেনের মরদেহ ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের মর্চুয়ারিতে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, কাতার থেকে ঢাকাগামী বিমানের একটি ফিরতি ফ্লাইটে তার মরদেহ ভারতের নাগপুর থেকে দেশে আনা হবে।
বিমান সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় ফ্লাইটের বিশেষ অনুমতি নিয়ে মরদেহ আনতে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।পাশাপাশি ক্যাপ্টেন নওশাদের দুই বোনের করোনা টেস্টের রিপোর্ট পেতেও কিছুটা সময় লাগবে। তাই ২ সেপ্টেম্বর ভোরে মরদেহ আনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিমান সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ০২৫ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে কাতারের উদ্দেশে রওনা হয়ে স্থানীয় সময় ৫টা ৪০ মিনিটে দোহায় পৌঁছাবে। একইদিন বিজি-০২৬’এ ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ভারতের নাগপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে রাত ১১টা ৩০ মিনিটে পৌঁছাবে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ নিয়ে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে ফ্লাইটটি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ক্যাপ্টেন নওশাদের দুই বোনও এসময় যাত্রী হিসেবে ফ্লাইটে থাকবেন।
সূত্র জানায়, ক্যাপ্টেনকে সম্মান জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের এমডি ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ বিমান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে সোমবার (৩০ আগস্ট) মারা যান ক্যাপ্টেন নওশাদ।
গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। পরে ফ্লাইটটিকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করান।
বিমান সূত্রে জানা যায়, আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাপ্টেন নওশাদ ফ্লাইটটিকে কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান এবং একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান।
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে যায়। মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়।
উল্লেখ্য, ক্যাপ্টেন নওশাদের কারণে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ১২৪ যাত্রীর জীবন রক্ষা পায়। পাঁচ বছর আগেও ১৪৯ যাত্রী আর সাত ক্রু’র জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ।