মো. রাসেল ইসলাম: বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পর এবার অটোমেশন সেবার আওতায় এসেছে বেনাপোল স্থলবন্দর। প্রায় দুই বছর পরীক্ষামুলক কর্মকান্ডের পর এবার পূর্ণাঙ্গ রুপে অটোমেশন সেবার আওতায় এসেছে দেশের সব চেয়ে বড় এ বন্দরটি। আমদানি পণ্যের সকল তথ্য এখন এন্ট্রি হচ্ছে কমপিউটার ডাটা বেজে। অটোমেশন সেবায় ঘরে বসেই কমপিউটার আর মোবাইলে তথ্য হচ্ছে আদান-প্রদান। এতে দ্রুত বাণিজ্য সম্পাদনের পাশাপাশি বেড়েছে নিরাপত্তা,স্বচ্ছতাও গতিশীলতা।
বন্দর সুত্রে জানা যায়, দেশের স্থলপথে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল স্থলবন্দর। ১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের সাথে ভারতের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে বেশ আগেই অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছে কাস্টমস হাউজ বেনাপোল। তবে বন্দরে অটোমেশন না থাকায় কাজের সমন্বয়ে বেশ বেগ পেতে হতো ব্যবসায়ীদের। ডিজিটাল যুগে এসেও বন্দরে আমদানি-রফতানি তথ্য এন্ট্রি হতো খাতা-কলমে। এতে w ক্ষেত্রে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ তেমনি দ্রুত তথ্য আদান প্রদানে বিলম্ব হতো। অবশেষে বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনুধাবন করে
২০১৯ সালে জুলাইয়ে পরীক্ষা মুলক বেনাপোল বন্দরে অটোমেশন কার্যক্রম চালু হয়। চলতি মাসে এসে পূনাঙ্গ প্রক্রিয়ায় এ অটোমেশন সেবা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরের প্রশাসনিক ভবন,রাজস্ব দপ্তর,এন্টি শাখা,ওয়ার হাউজ সব খানে অটোমেশন পদ্ধতিতে কার্য সম্পাদন হচ্ছে। আমদানি পণ্য বন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে রাজস্ব পরিশোধ পর্যন্ত সব তথ্য থাকছে কর্মকর্তাদের নজরে। মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরাও তাদের পণ্যের অবস্থান জানতে পারছেন। এতে সুফল পেতে শুরু করেছেন বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যাবসায়ীরা।
আমদানি কারক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আগে বন্দরে গিয়ে রেজিস্ট্রার খুজে দেখা লাগতো তার পন্য কবে বন্দরে ঢুকেছে। পন্যের পরিমান কত? কোথায় খালাস করে রাখা হয়েছে এবং পণ্যের রক্ষনা-বেক্ষন বাবদ বন্দরের খরচ কত এসেছে। এখন অটোমেশন সুবিধায় মোবাইলের মাধ্যমে সব তথ্য নিমিশেই জানা যায়। এতে পরিশ্রম ও সময় সাশ্রয় হয়েছে।
বেনাপোল আমদানি,রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বন্দরটি এতদিন আধুনিকায়নে পিছিয়ে ছিল। আগে শুল্কফাঁকি থেকে শুরু করে এক জনের পণ্য আর এক জন নিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে এ বন্দরে। তবে এখন সে সুযোগ আর নেই। বন্দর অটোমেশন আওতায় আসায় ব্যবসায়ীরা ঘরে বসেই মোবাইলে সার্বক্ষনিক জানতে পারছেন আমদানি পণ্যের তথ্য। এতে বাণিজ্যক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বেড়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর ওয়ার হাউজ সুপার ধুননঞ্জয় বার্মা বলেন, আমদানি পণ্যের তথ্য আগে খাতা কলমে এন্ট্রি করে তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এখন সম্পূর্ণ কমপিউটারে ডাটাবেজ এন্টিতে অটোমেশনের মাধ্যমে দ্রুত তথ্য প্রদান করা যায়। বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসব তথ্য এক পলকেই দেখতে পারছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আব্দুর লতিফ জানান, কাস্টমসের পাশাপাশি বন্দর অটোমেশন হওয়াতে বাণিজ্যে গতি ও স্বচ্ছতা বেড়েছে। আমদানি কারকেরা তথ্য চাইলে দ্রুত সরবরাহ করতে পারি। তারা ইচেছ করলে নিজেরাও আমদানির তথ্য মোবাইলে দেখতে পান। তবে বন্দরের সাথে কাস্টমসের অটোমেশন সংযোগ হলে সুফল আরো বেশি পাওয়া যাবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দিকে পাইলট প্রকল্প হিসাবে পরীক্ষামুলক বেনাপোল বন্দরে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়। চলতি বছরে এসে এখন সব সেবা চালু হওয়ায় সুফল পেতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে রাজস্ব পরিশোধ পর্যন্তসব তথ্য নজরদারীতে থাকে। এটি বাণিজ্য সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রাখছে।