বরগুনায় এলজিইডি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেন নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি টাকা নেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
ভয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ না খুললেও ঠিকাদাররা জানান, প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই শতকরা হিসাবে টাকা দিতে এলজিইডি অফিসে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন এমন ঘুষ লেনদেনের কারণে উন্নয়ন কাজগুলো নিম্নমানের হচ্ছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ফোরম্যান জিয়াউর রহমান বুঝে নিচ্ছেন ঘুষের টাকা। প্রকল্প পরিচালকসহ কোন কর্মকর্তাকে কত পার্সেন্ট দিতে হবে, তাও বুঝিয়ে বলেন তিনি।
যমুনা টেলিভিশনের হাতে আসা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, এলজিইডি’র আমতলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক হুমায়ুন কবির একজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। ইউএনও, ইঞ্জিনিয়ারসহ কর্মকর্তাদের ভাগের টাকা দেয়ার পর কিছু থাকবে না বলেও আক্ষেপ করতে শোনা যায় তাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোরম্যান জিয়াউর রহমান নিজেকে অসুস্থ দাবি করে কথা বলতে রাজি হননি। আর হিসাবরক্ষক হুমায়ন কবির বলেন, আমাদের অফিসে বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আসে না?। ইউএনও, ইঞ্জিনিয়ারসহ কর্মকর্তাদের ভাগের টাকা দেয়ার কথোপকথনের কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোনো কথা বলছি কিনা আমার মনে নেই।
এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের টাকা নেয়ারও একটি ভিডিও হাতে এসেছে যমুনা টেলিভিশনের। ইউএনও’র কার্যালয়ের সামনে ফরহাদ জোমাদ্দার নামে এক ঠিকাদারের সাথে মারামারিও করতে দেখা যায় মিজানুর রহমানকে। অভিযোগ, ঘুষ লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা।
বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মিজানুর রহমান বলেন, নিলামের একটি কাগজ আনার জন্য ডিসি অফিসের দিকে তড়িঘড়ি করে রওনা দিয়েছি। আমি তাকে বললাম পরে এসে আপনাকে কাগজটা দিবো। তখন উনি বলে না এখনি দিতে হবে। এই জিনিসটা আসলে উনি সহ্য করতে পারেননি।
বিল ও জামানত আটকে যাওয়ার ভয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। এলজিইডি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
বরগুনার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বলেন, মারামারি বা হাতাহাতি বা যেভাবে প্রকাশ্যে তারা ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছে এটা জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক। আমাদের জন্যও এটা খুবই দুঃখজনক।
এদিকে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির দোহাই দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী।