মো. রাসেল ইসলাম, যশোর জেলা প্রতিনিধি : প্যারালাইসিসে আক্রান্ত আজগার আলীর বয়স পঁচাশির মত। চিকিৎসা আটকে আছে অর্থাভাবে। যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাদ্রাসার সামনে রাস্তার ধারে তাদের ছোট্ট কুড়ে ঘর। তিন শতক জমির মধ্যে এক শতক বিক্রি করে এতদিন চিকিৎসা খরচ চালালেও এখন তিনি আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬৫) অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বিপাকে। চোখের জল যার একমাত্র সম্বল। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে শরিফুল ইসলাম দিনমজুর। বড় মেয়ে পাপিয়া এক বছর আগে দুটি সন্তান রেখে মারা যায়। ছোট মেয়ে সিপিলা খাতুন বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। তিন ছেলে মেয়ের একমাত্র আয়ের উৎস ছেলে শরিফুল ইসলাম আগে থেকেই আলাদা হয়ে গেছেন। তার দিন চলেনা। এখন তার পরিবার (ছেলে-মেয়ে-বউ) নিয়ে কোনো মতে দিন মজুরীতে সংসার চলে অভাবের মধ্যে।
এ অবস্থায় অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে অসুস্থ আজগার আলী মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য সামান্য সহযোগিতা করলেও চেয়ারম্যানের থেকে চিকিৎসার অর্থ সহায়তার আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। এতে অসহনীয় দুরবস্থায় দিন কাটছে আজগার আলী ও সুফিয়া বেগমের।
প্যারালাইসিসে ধুঁকছেন আজগার আলী। দীর্ঘ ১০ বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আজগার আলী। তখন থেকে কাজকর্ম খুব বেশি করতে না পারলেও মোটামুটি চলার মত কাজ করতে পারতেন। কিন্তু হঠাৎ গত ১০-১১ মাস আগে স্ট্রোক করে (বর্তমান প্যারালাইসিসে আক্রান্ত) অচল হয়ে পড়েন তিনি। হারিয়ে ফেলেন হেঁটে চলার ক্ষমতা, সেই সাথে কথা বলার ক্ষমতা। কয়েক বার লোকের কাছ থেকে ঋণে টাকা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেও পুরোপুরি সুস্থ না হতেই ফুরিয়ে যায় আজগার আলী ও সুফিয়া বেগমের সব গোছানো উপার্জন। আবার নিঃস্ব হয়ে যায়। সারাদিন চোখের জল ফেলে আর খেদমত করে পঙ্গু স্বামীর। ঘরের ভেতর প্রশাব পায়খানা করেন তার স্বামী। সে চলতে ফিরতে পারে না। অগত্যা নিজের হাতে পরিস্কার করতে হয় তাকে। সারাদিন স্বামীর সেবা আর ফাঁক বুঁঝে খাবার জোগাড় করা সুফিয়ার নিত্য দিনের কাজ। পয়সার অভাবে ওষুধের কথা তারা ভুলেই গেছে। দু‘মুঠো খাবার জোটে না তাতে আবার ওষুধ? সে তো স্বপ্ন সুফিয়ার কাছে। তাই এই বয়সেও সারাদিন ভিজে থাকে সুফিয়া বেগমের চোখ।
সুফিয়া বেগম বলেন, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি। এবার দু’টি ঈদ গেছে তাতে কোনো অনুদান সহযোগিতা পায়নি। আমাদের নামে কোনো চালের কার্ডও নেই। তবে মেম্বার আব্দুল মাঝে-মধ্যে চিকিৎসা খরচের কিছু টাকা দিয়ে যায়।
এই ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল বলেন, আমি সবসময় আজগার আলী ও সুফিয়া বেগমের সাধ্যমত সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা করি।
লক্ষনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, তাদের আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি তাদের একটা চালের কার্ডের ব্যবস্থা করে দিবো।
সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা আজগার আলী ও সুফিয়া বেগমের সহযোগিতা করতে চাইলে তাদের নিজস্ব ০১৭৬২-১০৪৬১৪ (বিকাশ) এই নাম্বারে সহযোগিতা করতে পারেন।
এদিকে অসুস্থ আজগার আলীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে নিজের বিকাশ নাম্বার দিয়ে শার্শার লক্ষণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে শওকত আলী প্রতারণা করে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।