আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১নং জয়নগর ইউনিয়নের খোরদো-বাটরা এলাকার আশ্রায়ন প্রকল্পের কয়েকজন উপকারভোগীর থেকে অর্ধলক্ষাধিক টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্যে বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ১৭টি ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেই সময়ে কাজগুলি দেখাশুনা করেন কলারোয়া উপজেলার সাবেক ইউএনও মৌসুমী জেরিন কান্তা। কিন্তু সেই কাজ শেষ হতে দেরি হয়। মাত্র মাস তিনেক আগে উপকার ভোগীদের কাছে সেই ১৭টি ঘর এবং পরে আরও ২টি ঘরসহ মোট ১৯টি হস্তান্তর করা হয় উপকার ভোগীদের কাছে। এরই মধ্যে সেখানকার বসবাসরত উপকার ভোগীদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ঘরের নির্মাণকাজ অথবা মাটি ভরাট কাজ করার অভিযোগ তুলেছে খোদ সেখানকার বসবাসরত উপকার ভোগীরা।
অভিযোগের তীর সরাসরি নির্মাণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত ওই খোরদো-বাটরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বজলুর রহমানের দিকে।
জয়নগর ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পের ১০নং ঘরের মালিক আব্দুল ওহাব অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন-ঘর পাওয়ার আগে আমার নিকট স্থানীয় মাহফুজার মালির ছেলে হুমায়ুন মালি আমার নিকট ২০ হাজার টাকা দাবী করেছিলো। আমি একজন অসহায় ভ্যানচালক হয়েও অনেক কষ্টে ধার দেনা করে ১৫ হাজার টাকা তুলে দেই। আবার সেই টাকা আবার হুমায়ুন মালি মেম্বর বজলুর হাতে তুলে দেয়। এদিকে মাহফুজার মালির পুত্র হুমায়ুন মালি জানান-আব্দুল ওহাবের আমি খুব বিশ্বস্থ হওয়ার কারণে একদিন আব্দুল ওহাব আমার কাছে বজলু মেম্বরের সামনে ১৫ হাজার টাকা তুলে দেয় আমি সেখানেই মেম্বর বজলুকে সেই ১৫ হাজার টাকা বুঝ করে দেই। আবাসন প্রকল্পের ৬নং ঘরের মালিক সাইদুলের স্ত্রী ফাতেমা বলেন, বজলু মেম্বর ঘরের ভিতের মাটি ভরাট করার জন্য আমাদের নিকট ২০হাজার দাবি করলে স্থানীয় নেছার আলীর ছেলে আমার ভাশুরের মাধ্যমে ১৯ হাজার টাকা দিয়েছি। ৮নং ঘরের মালিক আখের রস বিক্রতা মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী রুপালি বলেন, বজলু মেম্বর ৬মাস আগে ঘরের ভিতের মাটি ভরাট করার জন্য ২০হাজার টাকা দাবী করে। মেম্বার বলে টাকা না দিলে ঘর তোমরা পাইবা না। পরে আমার নোনদের একটা গরু বিক্রি করে ২০হাজার টাকা আমার শ্বশুর শাশুড়ি ও ননদের সামনেই বজলু মেম্বরকে দিয়েছি। এছাড়াও মৃত মকবুল সরদারের বিধবা স্ত্রী জোহরা খাতুনের নিকট মোবাইলে ১৫ হাজার টাকা দাবী করেন বলেন অভিযোগ করেন। জোহরা একটাকাও দিতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এর পরে ঘরে বালি দেওয়া বাবদ ১৫০০ টাকা দিয়েছি মিস্ত্রি ইলিয়াসের কাছে বলেও জানান জোহরা।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বলেন, আমি কোন উপকার ভোগীদের নিকট থেকে একটি টাকাও নেইনি। আমাকে ফাঁসানো জন্য সাজানো নাটক তৈরি করছে। ১৯টি ঘরের মধ্যে মাত্র ৩ জনের অভিযোগ টাকা নেওয়ার এটা সত্য নয়। এছাড়া ঘর তৈরির সময় নিকটে মাটি না থাকার দরুন বাইরের থেকে ট্রাকে করে মাটি এনে ঘরের ভিত ভরাট করা হয়েছে। সে টাকাও সব আমাকে পরিশোধ করেনি। ফলে খোরদো-বাটরা ভূমিহীনদের ও গৃহহীনদের পূর্ণবাসনের জন্য নিচু জায়গায় মাটি ভরাটের নামে ঘরের ভিত ভরাটের ৬৮হাজার টাকার একটি প্রকল্প দেয়া হয়। ওই প্রকল্পে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দীন আল মাসুদ কে সভাপতি, ইউপি সদস্য বজলুর রহমান, গন্যমান্য ব্যক্তি শলোমান সরকার, আনসার ভিডিপি মেহেদী হাসান ও শিক্ষক ইমামুর রহমানকে সদস্য করে ৫সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি দেওয়া হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান আমাকে না জানিয়ে গোপনে ওই টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। আমার পাওনা ৬৮হাজার ও আগের বাবদ ১০ হাজার মোট প্রায় ৮০হাজার টাকা মতো আমি পাবো। সেই টাকা চাওয়াতে আজ ৬মাস পরে লোক সাজিয়ে আমার নামে নাটক তৈরী করছেন চেয়ারম্যান।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান শামসুদ্দীন আল মাসুদ বাবু বলেন, উপকারভোগীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আমি আগে জানতাম না তবে এ ব্যাপারে ইউএনও’র নিকট অভিযোগ হয়েছে। চেয়ারম্যান বাবু আরো বলেন- প্রকল্পের ৬২হাজার টাকা তুলে আমি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট দিয়েছি। আমি বজলু মেম্বরকে কেন দিতে যাবো? বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিককে বলেন, তিনি বিষয়টির খোঁজ-খবর নিবেন।
ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বলেন ঘুষের টাকা ইউপি চেয়ারম্যান বাবু নিয়েছেন আবার বাবু বলেন বজলু নিয়েছেন। আসলে ঘুষ বাণিজ্য কে করল ? এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষ্ণ করে প্রতিকার চেয়েছেন ভূমিহীনরা।