বরগুনার আমতলীতে হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের দায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামানকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি এবং টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্যদের ঘর দেওয়ার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বদলির অদেশে জারি করেন। মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ঘর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে আমতলী উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী এনামুল হক বাদশাকে বদলির পর সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা প্রশাসক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-এর অধীনে প্রথম ধাপে ১শ’ এবং দ্বিতীয় ধাপের অধীনে আমতলী উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য ৩শ’ ৫০টিসহ মোট ৪শ’ ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউনিয়ন অনুযায়ী বরাদ্দ থেকে শুরু করে সব কাজেই লুকোচুরি এবং ঘড় নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। নীতিমালা অনুযায়ী ঘর বরাদ্দ থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা। ইউএনও কোনও সভা না করে কাগজে-কলমে একটি কমিটি গঠন দেখিয়ে গোপনে সব কাজ করতেন একা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘কোনও কমিটি হয়নি। ইউএনও পকেট কমিটি করে স্বাক্ষর নিয়ে সব কাজ একাই করেছেন। আমিসহ কমিটির কোনও সদস্য ঘর নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই জানি না। ঘর বরাদ্দ, মালামাল ক্রয় করাসহ সব কাজ ইউএনও তার কার্যালয়ের কর্মচারী এনামুল হক বাদশার মাধ্যমে করতেন। দফতরে দফতরে গিয়ে সাদা খাতায় বাদশা সভার রেজুলেশনের জন্য স্বাক্ষর নিতেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর ইউএনও তা সংরক্ষণ করতেন। আমি রেজুলেশনে স্বাক্ষর দিতে না চাইলে ইউএনও আমাকে মারতে উদ্যত হন।’
কমিটির আরেক সদস্য আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঘর নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ইউএনও গোপনে সব কাজ একাই করেছেন। আমি ওই কমিটির সদস্য কিনা তাও জানাননি ইউএনও। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সভা আছে বলে তিনি লোক পাঠিয়ে সাদা খাতায় স্বাক্ষর নিতেন।’
এর আগে, ঘর নির্মাণে ইউএনওর ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তা নজরে আসে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের। তাৎক্ষণিক তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই তদন্ত কমিটির ঘরের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ঘর দেওয়ার সত্যতা পায়। জেলা প্রশাসক ওই প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ইউএনও মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
একই অভিযোগে গত ৫ মে তার কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক বাদশাকে বরগুনার বেতগী উপজেলায় বদলির পর সাময়িক বরখাস্ত করেছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ জুন হতদরিদ্রদের দেওয়া ঘরের উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একযোগে সারাদেশে প্রচারের আয়োজন থাকলেও আমতলীতে কোনও আয়োজন ছিল না। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও আমতলীর ঘরের নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণকাজ করায় বেশ কয়েকটি ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করার আদেশের কপি পেয়েছি। আদেশ মোতাবেক তাকে ইতোমধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’