অনলাইন ডেস্কঃ মানুষ দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয় না। যেসব মানুষ ফের করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছেন, সেগুলো মূলত পরীক্ষার ত্রুটি বা ব্যার্থতা। দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণা শেষে এই অনুসিদ্ধান্তে এসেছেন। দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষকরা বলছেন, কভিড ১৯ ভাইরাস মানুষের শরীরে একবার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার সক্রিয় হওয়া অসম্ভব। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের স্কাই নিউজ।
খবরে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। গড়ে ২.৩ শতাংশ হারে মারা গেছেন ২৪৫ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এই রোগে আক্রান্তদের গড় মৃত্যু হার ৩.৪ শতাংশ।
সেই তুলনায় কোরিয়ায় মৃতের হার কম। তিবে দেশটিতে প্রায় ২৭৭ জন রোগী সুস্থ হওয়ার ফের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন ও জাপানেও এমন রোগী দেখা গেছে। এ কারণে এমন উদ্বেগও দেখা যায় যে, ভাইরাসটি হয়তো এত দ্রুত পরিবর্তিত বা মিউটেটেড হয় যে এই ভাইরাস থেকে সুস্থ হলে যে ফের আক্রান্ত হবে না কেউ, তা বলা যাবে না। ঠিক এই আশঙ্কার কারণেই বিভিন্ন দেশের সরকার যখন ‘ইমিউনিটি পাসপোর্ট’ প্রণয়নের কথা ভাবছিল, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। যেসব মানুষের শরীরে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ও যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়েছে, তারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবেন না ধরে নিয়ে তাদেরকে কাজে যোগদান বা ভ্রমণের অনুমতি দেওয়াকেই ইমিউনিটি পাসপোর্ট বলা হচ্ছিল। তবে হু বলছে, কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন ও শরীরে অ্যান্টিবডি আছে, তারা যে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হবেন না, তার নিশ্চয়তা নেই। এমন কোনো গবেষণাও হয়নি।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। এই ভাইরাসের জীনগত বা জেনেটিক বিশ্লেষণে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ধরা পড়েনি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার (ইমিউন সিস্টেম) আড়ালে রয়ে যেতে সক্ষম। তারা বলছেন, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়ছেন বলে যেসব রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের আসলে পরীক্ষার ফল ভুল ছিল। তারা বলছেন, ওই রোগীরা সুস্থ হলেও শরীরে কিছু মৃত ভাইরাসের নমুনা থাকে। কিন্তু যেই উপায়ে তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে সক্রিয় ও জীবিত ভাইরাস ও মৃত ভাইরাসের পার্থক্য করা যায়নি। এ কারণেই তাদের শরীরে সক্রিয় ভাইরাস না থাকলেও, তাদের ফলাফল পজিটিভ এসেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিডিসি আরও বলেছে, এইচআইভি ও চিকেনফক্সের মতো ভাইরাসগুলো মানবকোষের নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। এরপর সেখানে বছরের পর বছর ধরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। এরপর অকস্মাৎ পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস কোষের নিউক্লিয়াস ভেদ করতে পারে না।
সিডিসি কমিটির প্রধান ডা. ওহ মিয়ং-ডন বলেন, ‘এর অর্থ হলো এই ভাইরাস দীর্ঘকালস্থায়ী বা পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সক্ষম নয়।’ তবে তারা এ-ও বলছেন, ভবিষ্যতে হয়তো এই ভাইরাস পরিবর্তিত হতে পারে ধীরে ধীরে। এভাবে একসময় মানুষকে এই মিউটেটেড বা পরিবর্তিত ভাইরাস আক্রমণ করলে, মানুষের শরীরের ওই অ্যান্টিবডি তাকে চিনবে না। ফলে তখন মানুষ আক্রান্ত হবে। কিন্তু এই মিউটেশনের হার এত দ্রুত নয় যে সুস্থ হওয়ার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষ ফের আক্রান্ত হবে।