আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পাউডার দিয়ে মুড়ি তৈরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার সরেজমিনে ব্যবসায়ী, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কলারোয়ায় মুড়ির চাহিদা একটু বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরা কম দামে মোটাচাল নিয়ে এসে বড় বড় মুড়ি তৈরী করছে। কলারোয়ায় রাত ও দিনে মুড়ি তৈরির কাজ চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই মুড়ি তৈরিতে বিষাক্ত পাউডার, সোডিয়াম কার্বনেট ও সালফার এবং ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। ব্যবসায়ীদের মতে, মুড়ি তৈরির জন্যে নিম্নমানের চালের সঙ্গে হাইডোজ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে মুড়ি। এতে খরচ কম আর মুনাফা বেশি। উন্নতমানের মুড়ি তৈরি করতে উন্নতমানের চাল ব্যবহার করতে হয়। এতে কারখানা মালিকদের খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে কারখানা মালিকরা পাউডার ব্যবহার করে মুড়ি তৈরি করে থাকে। পাউডার ব্যবহার করলে মুড়ি আকারে বড় ও ঝকঝকে সাদা বর্ণ ধারণ করে। হাইড্রোজ, সোডিয়াম কার্বনেট ও সালফার ছাড়া মুড়ির বাজার ধরা সম্ভব নয়। ফলে গোপনে তারা এটা করছেন।
কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: শফিকুল ইসলাম জানান, হাইড্রোজ একটি রাসায়নিক উপাদান। এটা সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইট নামেও পরিচিত। কৃত্রিমভাবে এটা মুড়িকে আরও সাদা ও আকারে বড় করে। তিনি বলেন, এর প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির ক্ষতি ছাড়াও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরনের অসুখ হতে পারে। এমন প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন কলারোয়ায় ৭/৮টি কারখানায় বিপুল পরিমাণ বিষের মুড়ি তৈরি হচ্ছে। মানুষ নিজের অজান্তেই মুখে তুলে নিচ্ছে বিষ! সরেজমিনে মুড়ি তৈরির একটি কারখানায় গিয়ে এমন ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। এসব কারখানায় তৈরি নরম ধবধবে সাদা মুড়ি হাতবদল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। আর মুড়ি খেয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বিষাক্ত কেমিক্যালের পরিমাণও। মুড়ি তৈরির কারখানার শ্রমিকরা জানান, রাত-দিন চুলা জ্বলন্ত থাকায় কারখানায় কক্ষটিও উত্তপ্ত থাকে। ফলে শ্রমিকদের ঘামে কক্ষের পুরো মেঝে থাকে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। ময়লা-নোংরা খোলা মেঝে থেকেই প্যাকেটজাত মুড়ি গুদামজাত করা হয়। মুড়িতে দুই দফা বিষাক্ত কেমিক্যালের মিশ্রণ ঘটে। ধান থেকে চাল তৈরির পর চালকল মালিকরা তাতে সালফার মিশিয়ে মুড়ি তৈরির চাল কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করে। দিনের পর দিন এ চাল কারখানার গুদামে পড়ে থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকায় মুড়ি উৎপাদনকালে চাল উপযোগী থাকে। ফের মুড়িকে আরও আকর্ষণীয় করতে কারখানা মালিকরা ইউরিয়া, সোডিয়াম কার্বনেট ও সালফার মেশান। মুড়ি তৈরির বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র। কারখানায় ইউরিয়া ছাড়াও চালে মেশানো হয় হাইড্রোজ। এটা সোডিয়াম কার্বনেট নামে পরিচিত, যা মূলত খাবার সোডা। বেশি পরিমাণ এটি ব্যবহারের কারণে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
কেমিক্যাল মিশ্রিত মুড়ি খেলে তাৎক্ষণিক বদহজম, বমি বমি ভাব ও মাথাধরাসহ শারীরিক সমস্যা হতে পারে। ইউরিয়াতো আমাদের খাবারের কোনো উপাদান নয়। এটি খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে স্টমাকের ক্ষতি করে। শুধু তাই নয়, এটি রক্তে মিশে গিয়ে কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে। এলাকাবাসি এই মুড়ি তৈরির কারখানা গুলো বন্ধের দাবিতে প্রশাসনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।