আবদুল কাদের মির্জা, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার এ মেয়র অবলীলায় সমালোচনা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের। কথার ‘বোমা ফাটিয়েছেন’ আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও। তবে গত ২২ মে ওবায়দুল কাদের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা কাদের। এরপরই যেন ছোট কাদেরের ধারালো কণ্ঠ কিছুটা নিস্তেজ হতে থাকে।
আপাত দৃষ্টিতে এবং কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিলো দুই ভাইয়ের মধ্যে ‘মিটমাট’ হয়ে গেছে। এরপর ডাক্তার দেখাতে আমেরিকা যাওয়ার ঘোষণাও দেন কাদের মির্জা। তবে বুধবার (০৯ জুন) আমেরিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকালে ফেসবুক লাইভে এসে ফের বোমা ফাটালেন বসুরহাটের এ পৌর মেয়র।
সেখানে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একসময় মায়া ভাই (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) রাজপথ কাঁপানো নেতা ছিলেন। কিন্তু তার ছেলে ও জামাইয়ের কারণে আজ কোথায়? খবর নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে করুণা করে রেখেছেন। শেখ হাসিনা আপনাকে ছাড়া দল চালাতে পারবেন না এটা মনে করবেন না।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে তিনি আমেরিকায় যাননি বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তার ভাই (ওবায়দুল কাদের), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নোয়াখালী ও ফেনীর দুজন সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ আমেরিকা প্রবাসী কয়েকজন সাবেক নেতারও সমালোচনা করেন।
কাদের মির্জা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বিএনপিকে বলেন মিডিয়া সর্বস্ব রাজনৈতিক দল। আপনি মিডিয়ার বাইরে কী কাজ করেন? আপনি আমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আপনি এলাকার ২০০ লোকের নাম বলতে পারলে আমি হিজরত করবো।
বড় ভাইকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, আপনি যেটা হবেন বলে চিন্তা করতেছেন সেটা আপনি এবং আপনার স্ত্রীর কারণে কঠিন হয়ে গেছে। আপনার মন্ত্রণালয় সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়। আপনি এলাকার ভোট নিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। এখন ভুলে গেছেন। এখন আপনার স্ত্রী এখানকার রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। আপনার স্ত্রী বাংলাদেশের ১০ জন দুর্নীতিবাজের মধ্যে একজন।
বসুরহাটের এ পৌর মেয়র বলেন, নেত্রী ছাড়া আপনার সঙ্গে কেউ নেই। যদি থাকে তাহলে আমি হিজরত করবো। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কী, দেশের সবাই জানে। একরাম-নিজাম এদের উত্থান কার মাধ্যমে? আমার কোনও আত্মীয় আমার সঙ্গে নেই। আপনার স্ত্রী সবাইকে প্রভাবিত করে নিয়ে গেছেন।
কাদের মির্জা বলেন, উপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা ছাড়া আমি কাউকে ভয় করি না। এ সময় তিনি তার তিন ভাগিনা মাহবুব রশিদ মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম রাহাত ও সিরাজিস সালেকিন রিমনসহ স্থানীয় নেতাদের কট্টর সমালোচনা করেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি আমেরিকা গেলে অপরাজনীতির হোতারা বিএনপির আমলের মতো আমাকে সরিয়ে এখানে অন্যজনকে মেয়র হিসেবে বসাতো। এমন প্রস্তুতি তারা নিয়েছে।
কাদের মির্জা বলেন, আমাদের দল ক্ষমতায় আর আমরা মাইর খাচ্ছি। আমার ভাই নাকি মন্ত্রী। হেতেন কিসের মন্ত্রী? হে মিয়ার এলাকায় ৫ মাস ধরে ঝামেলা চলের, হে মিয়া মন্ত্রী। আগামী ৭ দিনের মধ্যে অপরাজনীতির হোতাদের গ্রেফতার না করলে, আমার নিরীহ নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি না দিলে এখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যে, হয়তো ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জের মাটি স্পর্শ করতে পারবেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক করেন, না হয় পরিণতি ভয়াবহ হবে।
কাদের মির্জা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম আগে কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না। কপাল ভালো মন্ত্রী হয়েছেন। তার কর্মীরাও বলে আমাদের নেতা মন্ত্রী হবে আমরা ভাবিনি। আপনি মন্ত্রী হয়েছেন ভালো কথা। আমি আপনার কাছে একটি আবেদন দিয়েছি। আজ ৪ মাস হলো এ দরখাস্ত আলোর মুখ দেখেনি। এটা নাকি রাজনীতি। এটা নাকি মন্ত্রিত্ব। এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনার কর্মীরা বলে আপনি ভালো মানুষ। আমি বলবো, আপনি যেহেতু ভালো মানুষ সুতরাং আপনি নেত্রীকে বলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইমামতি করেন।