স্বামী সুমন মোল্লাকে (৩২) হত্যার পর করাত দিয়ে মাথা ও হাত-পা কেটে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেন স্ত্রী আরিফা। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া ও প্রেমিককে মারধরের প্রতিশোধ। রবিবার (৩০ মে) দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার জাকির হাসান এসব তথ্য জানান।
সুমন মোল্লা বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার গোলা বরননী গ্রামের জাফর মোল্লার ছেলে। মহানগরীর কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
আরিফা (২৩) দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে। পরকীয়া প্রেমিক তন্ময় সরকার (২৫) ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে। তন্ময় সরকারও সারদাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার জাকির হাসান বলেন, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে মহানগরের কাশিমপুর থানার সারদারগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুর পাড় এলাকার জালাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের ময়লার ভাগাড় থেকে অর্ধগলিত মাথা ও হাত-পা বিহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিচ্ছিন্ন দেহটি গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর অজ্ঞাত হিসেবে সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
২২ এপ্রিল কাশিমপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরিফা ও তন্ময়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আরিফার সঙ্গে তন্ময়ের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে তন্ময়কে একাধিকবার মারধর করেছেন সুমন। প্রতিশোধ নিতেই সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় স্বামীকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। সুমন ঘুমিয়ে পড়লে তন্ময়কে ফোন করে বাসায় নিয়ে আসেন আরিফা।
দুজন মিলে বালিশ চাপা দিয়ে সুমনকে হত্যা করে লাশ ঘরের ভেতর রেখে দেন। পরদিন করাত দিয়ে সুমনের মাথা, হাত-পা কেটে এবং চাপাতি দিয়ে পেট কেটে ফেলেন। হাত-পা বিহীন দেহ কাঁথায় পেঁচিয়ে জালাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেন। দেহের অন্যান্য অংশ পলিথিনে মুড়িয়ে তেতুইবাড়ি এলাকার মোজা তৈরির কারখানার পাশের ভাগাড়ে ফেলে দেন।
তাদের দেওয়া তথ্যে শনিবার (২৯ মে) সকালে কারখানার পাশের ময়লার ভাগাড় থেকে পলিথিনে মোড়ানো মাথা, দুই হাত-পা এবং রাতে সারদাগঞ্জের হাজীবাড়ি পুকুরপাড়ের ময়লার স্তূপ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত উদ্ধার করা হয়। তন্ময়ের ঘর থেকে সুমনের মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার ও কাশিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব-এ খোদা।