আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে অস্বাভাতিক জোয়ার বৃদ্ধিতে উপকূল রক্ষিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে পূর্ণিমার পূর্ণ জোয়ারের সময় নদীতে হঠাৎ ৬/৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়।
এসময় উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও কৈখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। মানুষের মনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি.এম মাছুদুল আলম জানান, কপোতক্ষ হঠাৎ জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাঁগড়ামারি ৩নং এলাকায় পাউবো বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে প্রবেশ করে। এতে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে যায়। তাছাড়া যাবতীয় মৎস্য ঘের তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এড. আতাউর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এসময় ঝাঁপা, সোনাখালী, পূর্ব ও পশ্চিম পাতাখালী সহ কামালকাটি এলাকা তলিয়ে যাবতীয় মৎস্য ঘের একাকার হয়ে যায়।শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.ন.ম. আবুজর গিফারী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সরকারী সাহায্য হিসাবে প্রতিটি ইউনিয়নে নগত ২৫ হাজার টাকা ও ২টন করে চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০টি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ২০ কিঃমিঃ বেড়ী বাঁধ ঝুকিতে থাকায় এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
দুপুর ১২ টার দিকে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া ল ঘাটের দক্ষিণ পাশে দু’টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ভিতরে ঢুকতে শুরু করে। প্রায় ৩০০ ফুট মত বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যতলা, চাকলা, কল্যাণপুর, রুইয়েল বিল, আনুলিয়া ইউনিয়নের নাকনা সহ ৬টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ওভারফ্লো হয়। নদীর পানি কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা, সুভদ্রকাটি, রুইয়ের বিল, হরিশখালি, সোনাতনকাটি, নাকনা গ্রামে জলমগ্ন করে।আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, জেলেখালী, মানিকখালী, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, পুইজালা, কাকড়াবুনিয়া, কলিমাখালী, হাজরাখালী, বড়দলের কেয়ারগাতিসহ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পাউবো’র কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ রক্ষার কাজে এগিয়ে যান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসাইন খাঁন বলেন, কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং ওভারফ্লো হয়েছে। কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে বাঁধ রক্ষা করা হবে। সাইক্লোনের ছোবল থেকে প্রাণহানি রোধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮০টি সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিম সকল এলাকায় দায়িত্বরত আছে। জেলা প্রশাসন মহোদয় দুর্যোক কবলিতদের সহায়তার জন্য প্রতি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা করে রিজার্ভ বরাদ্দ দিয়েছেন। গোখাদ্য বাবদ ১ লক্ষ টাকা ও শিশু খাদ্য বাবদ ১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এসও গোলাম রাবাবী ও আলমগীর হোসেন জানান, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নে অনেক স্থনে ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও ওভারফ্লো হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষা ও ওভারফ্লো ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হবে।