সিরাজুস সালেকিনঃ গোপনে ইসরাইল সফর করেছেন একাধিক বাংলাদেশি। এদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র তারকা, ব্লগারসহ নানা পেশার মানুষ।
তবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করলেও তাদের ভ্রমণের কোনো তথ্য পাসপোর্টে উল্লেখ নেই। বাংলাদেশ থেকে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা রুট হিসেবে তৃতীয় দেশ ব্যবহার করেছেন। পরিচয় গোপন রেখে ইসরাইল ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরাইল সফরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি ইসরাইলকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল সফরের নিষেধাজ্ঞার বাক্যটি তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে এ নিষেধাজ্ঞার কথা লেখা রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের ইসরাইল ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সর্বপ্রথম ইসরাইল ভ্রমণ করেছেন ডা. শাদমান জামান। ২০১৬ সালে তিনি লন্ডন থেকে ইসরাইলে যান। পরবর্তীতে একাধিকবার ইসরাইলে গেছেন। তার ভ্রমণ নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছে দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক জেরুজালেম পোস্ট। ইসরাইল সফরের পর শাদমান নিজেকে ইহুদি ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্থাপনে বর্তমানে তৎপরতা চালাচ্ছেন সাদমান। সম্প্রতি বাংলাদেশের পাসপোর্টে সংশোধন আনাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে। ডা. শাদমানের পর ইসরাইল ভ্রমণ করেছেন এক বাংলাদেশি ব্লগার। তিনিও ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে হংকং হয়ে ইসরাইলে যান। ওই ব্লগার তার ভ্রমণ কাহিনী ব্লগে লিখেছেন। আবেদনের দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে ভিসা দিয়েছে ইসরাইল। তবে পাসপোর্টে কোনো ভিসা লাগানো হয়নি। দূতাবাস থেকে আলাদা কাগজ দিয়েছে। ইসরাইলে আগমন বা বহির্গমনের কোনো সিলও পাসপোর্টে দেয়া হয় না। ওই কাগজটাই ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে হয়েছে। বাংলাদেশি হওয়ায় ইসরাইলে ঢুকতে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুনে ওই ব্লগের অনেক ব্যবহারকারী ইসরাইল ভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের এক তারকা দম্পতি ইসরাইল সফর করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তারাও ২০১৬ সালে ব্যবসায়িক কাজে ইসরাইল সফর করেন। ফেসবুকে বেশ কয়েকটি আইডি থেকে তাদের ট্র্যাভেল ডকুমেন্টের ছবি শেয়ার হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ওই দম্পতি ২০১৬ সালের ১৭ই জুন থেকে ২১শে জুন পর্যন্ত ৪ দিন ইসরাইল সফরে ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ইসরাইল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে নিয়মিত ইসরাইলের খবরাখবর প্রকাশ করা হচ্ছে। পেইজটি থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও উৎসবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া পেইজটি থেকে ইসরাইলের নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও সফলতার খবর প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ ইসরাইলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কীভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে পারে সে বিষয়েও পেইজটি থেকে প্রচারণা চলে। ২০১৭ সাল থেকে পেইজটি এ প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ফেসবুকে দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে এ পেইজটি পরিচালনা করা হয়। লক্ষ্য উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- এটি বন্ধুত্ব, শান্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের একটি অনলাইন প্ল্যাটফরম। এর মাধ্যমে ইসরাইল সম্পর্কে সত্য তথ্য তুলে ধরা হয়। ইসরাইলের সঙ্গে অতীতে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে রাষ্ট্র। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার হন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। এর আগে ২০০৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশি সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীকে ইসরাইলে প্রবেশের চেষ্টার দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। সম্প্রতি আল জাজিরার একটি ডকুমেন্টারিতে হাঙ্গেরির মাধ্যমে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বাংলাদেশ ক্রয় করেছে বলে তথ্য পরিবেশন করা হয়। যদিও তা বাংলাদেশ সরকার অস্বীকার করেছে।
সংগ্রহঃ মানব জমিন