নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অপহরণের ১১ দিন পর মো. রিয়াদ নামে সাত বছরের এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে জালকুড়ি মাদবর বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন ড্রেনের পাশে একটি পরিত্যক্ত ডোবার মধ্যে লম্বা ঘাসের নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এদিকে নিখোঁজ শিশুর সন্ধান চেয়ে নিজেই ভাড়া করে মাইকিং করে খুনি।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে সুজন (২৭) নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকে রিয়াদের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ২৪ এপ্রিল বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মুনলাইটন সিনেমা হল এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় রিয়াদ।
শিশু রিয়াদের বাবার নাম মো. রাজু। সে তার মা-বাবার কনিষ্ঠ সন্তান। আদমজী সোনামিয়া বাজার এলাকায় করিম মিস্ত্রির ভাড়া বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতো শিশু রিয়াদ। রিয়াদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্দা জেলার সদর থানাধীন মিয়াপাড়া পূর্ব কমলয় এলাকায়। নিহত শিশু রিয়াদ সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের চরশিমুল পাড়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো।
আটককৃত সুজন সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার একটি রোলিং মিলে কাজ করতো। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের সোনামিয়া বাজার রেললাইনের পূর্ব পাশের (সাবেক মুনলাইট সিনেমা হল) এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় রিয়াদ। এদিকে বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে ২৮ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা।
ওই জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশ শিশুটির পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের কললিস্টের সূত্র ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে একটি নম্বর থেকে মুক্তিপণ দাবি করে শিশুটির পরিবারের কাছে ফোন করে। সে নাম্বারের সূত্র ধরে পুলিশ শিশুটির দুর সম্পর্কের চাচাতো খালু সুজনকে আটক করে। আটকের পর সুজন স্বীকার করে ২৪ এপ্রিল ভিকটিমকে অপহরণের পর ওই রাতেই তাকে মেরে ঘাসের নিচে লুকিয়ে রাখে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই শওকত জামিল পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, নিহতের পরিবারের সঙ্গে সুজনের বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে গত ২৪ এপ্রিল কেক খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় রিয়াদ। পরে বাড়ির সামনে থেকে সুজন তাকে অপহরণ করে রাতেই হত্যা করে জালকুড়িতে ড্রেনের পাশে ঘাসের নিচে লুকিয়ে রাখে।
আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িত অন্যান্যদেরকে আইনের আওতায় আনাসহ মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, লাশের গায়ে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
শিশু রিয়াদের বাবা দিনমজুর রাজু জানান, তার স্ত্রীর এবং অভিযুক্ত আসামি উভয়ের বাড়ি একই গ্রামে। কর্মসূত্রে তারা সিদ্ধিরগঞ্জে পৃথক ঠিকানায় ভাড়ায় বসবাস করছিলেন।
তিনি বলেন, নিখোঁজের দিন বিকালে আমার ভায়রা সুজন আমার দুই ছেলেকে দোকান থেকে কেক কিনে দেওয়ার জন্য নিয়ে যায়। পরে আমার দুই ছেলে কেক নিয়ে বাসায় আসে এবং আমার বড় ছেলে রিয়াদ আবার বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ। আমরা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি।
শিশুর পিতা বলেন, আমাদের সঙ্গে সুজনও খোঁজ করে। সুজন মাইক ভাড়া করে মাইকিংও করে। পরে অন্য একটি অপরিচিত ব্যক্তির ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন আমার কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তখন কণ্ঠ শুনেই সুজনকে আমার সন্দেহ হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে বিষয়টি জানাই।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, প্রায়ই সুজন চুরি, ছিনতাইসহ ছোটখাটো অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। চুরির ঘটনায় একাধিকবার এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিচার-সালিশ বসানো হয়েছিল। তাছাড়া একবার সুজন ওয়াকিটকি ব্যবহার করে পুলিশ পরিচয়ে রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে টাকা উঠাতে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
উৎসঃ যুগান্তর