আব্দুল্লাহ আল শাহীন, ইউএইঃ করোনায় বিশ্বের অর্থনীতি আজ নিম্নমুখী। দেশে দেশে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। এমন পরিস্থিতিও প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে মোটামুটি দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। করোনাকালীন এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেকার যুবকরা কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক বছর থেকে বন্ধ থাকায় যুবকরা নিজেদের নিয়ে চিন্তিত। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যেই দেশে সুযোগ পাচ্ছে পাড়ি জমাচ্ছে। করোনার শুরুতে সমুদ্র পথে ইউরোপ যাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও বন-জঙ্গল, পাহাড় বেয়ে অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে। যাওয়ার পথে অসংখ্য যুবক নিহত হয়। বর্তমানে সেইসব পথে যাওয়া অনেকটা বন্ধ হওয়ায় এবং আমিরাত সরকার ভিজিট ভিসায় এসে কাজের ভিসায় পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ দেয়ায় লাখো যুবক আমিরাতে আসছে।
দীর্ঘ এক যুগ থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কাজের ভিসা বন্ধ। দিনদিন আমিরাতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। হঠাৎ যুবকদের আগমনে আবারও বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনাভাইরাস আমিরাতের অর্থনৈতিক সেক্টরে বেশ চেপে ধরে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে। অনেকে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান সময়ে খানিক ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আমিরাতের অর্থনীতি। তবে পূর্বের জায়গায় যেতে আমিরাতের অর্থনীতিবিদদের মতে ২০২২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি যুবকরা ভিজিটে এসে কেমন সফল হচ্ছে তা বলাবাহুল্য। ভিজিটে এসে তারা দুই ধরনের ভিসা লাগাচ্ছে। ব্যবসায়িক ও চাকুরির ভিসা। ব্যবসায়িক ভিসা লাগিয়ে সবাই ব্যবসা করছে তা না বরং; ৯০ শতাংশ বিভিন্ন সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকুরী করছে। আর যারা চাকুরির ভিসা লাগাচ্ছে তাদের অধিকাংশই ক্লিনার, সাপ্লাই কোম্পানি, গ্রোসারি অথবা শপে কাজ করছেন। হাতেগোনা কয়েকজন বিভিন্ন অফিসে চাকুরির সুযোগ পাচ্ছেন।
এদিকে যারা ব্যবসায়িক ভিসা লাগাচ্ছে তাদের অনেকেই কাজের সন্ধান করে চলছেন কিন্তু কাজ পাচ্ছে না। এমন একজন সিলেট জেলার যুবক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি এসেছেন, গত ৪ মাস আগে। খালাতো ভাইয়ের বাসায় এসে উঠেছেন। আমিরাতে বৈধভাবে অবস্থান করার জন্য ব্যবসায়িক ভিসা লাগালেও এখন পর্যন্ত কোন কাজের সন্ধান করতে পারেন নি। একইভাবে কুমিল্লার জিয়া উদ্দিন ব্যবসায়িক ভিসা লাগিয়ে বেকার বাসায় বসে আছেন। বাসা ভাড়া আর খাবারের টাকা দেশ থেকে আনতে হচ্ছে।
মোহাম্মদ জসিম মিয়া, তিনি দালালের মাধ্যমে ফুজিরাতে আসেন ২ মাস পূর্বে। কথা ছিল এসেই কাজ শুরু করবেন। কিন্তু ২ মাস হয়ে গেল কাজেরই সন্ধান পাননি। তিনি বলেন, “দেড় লাখ টাকা দিয়ে ভিজিটে এসেছি। কাজের ভিসার জন্য দেশে আরও দুই লাখ টাকা রাখা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কাজই পাইনি।”
সজিব আহমদ, তিনি এক দালালের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে আমিরাতে এসেছেন। আসা মাত্রই ভিসা হয়ে যায়। কিন্তু কাজের কোন খবর নেই। তার দাবি, দালাল নামে মাত্র ব্যবসায়ী লাইসেন্স করে দেশ থেকে ১০ জন লোক নিয়ে এসেছে কিন্তু কাউকেই কাজ দিতে পারেনি। সবাইকে আজমানে বাসা ভাড়া করে রেখে শুধু সময়মত খাবার দিচ্ছে।
আমিরাতে ভিজিটে এসে ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ থাকায় অসংখ্য কথিত দালালরা নামে মাত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করে দেশ থেকে বেকার যুবকদের নিয়ে আসছে। এখানে এনে না দিতে পারছে কাজ, না দিতে পারছে বেতন। বলা যায় বাংলাদেশি দালালদের প্রতারণার শিকার এসব যুবকরা।এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় নিমজ্জিত আমিরাতে আসা যুবকরা। এভাবে চলতে থাকলে আমিরাতের শ্রম বাজার আবারও হুমকির মুখে পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। একদিকে বিমানের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া ও বিমানবন্দর কন্ট্রাক্ট অন্যদিকে কাজের নেই কোন নিশ্চয়তা। এমতাবস্থায় আমিরাতে আসার পূর্বে বিস্তারিত জেনে আসাটাই বুদ্ধমানের কাজ।