ঢাকা সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সিনিয়র চার জন নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠকটি অন্তত ২৫ মিনিট স্থায়ী হয় বলে জানিয়েছেন জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
এর আগে, শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকটি শুরু হয় বলে জানিয়েছিলেন জাপার চিফ প্যাট্রন রওশন এরশাদের একান্ত সচিব মামুন হাসান। ওই সময় নেতারা বৈঠক কক্ষে প্রবেশ করেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘৫৪ নদীর পানি, তিস্তা ইস্যু, ভিসা, কানেক্টিভিটি, ছাত্রদের স্কলারশিপ বৃদ্ধিকরণ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
জাপার প্রতিনিধি দলে ছিলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু জানান, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আমন্ত্রণ দিল্লি থেকেই জাপার কাছে এসেছে।’
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাবলু বলেন, ‘‘আমরা দেশের বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো অলরেডি এসব বিষয়ে কথা বলেছি। এই বিষয়গুলো কনসিডারেশন করা হবে।’’
বৈঠকে জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রসঙ্গও উঠে আসে কথাক্রমে, জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তার মন্তব্য, ‘এরশাদ সাহেবের সময় থেকেই ভারতের সঙ্গে জাতীয় পার্টির যে সুসম্পর্ক, তা বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরাও জানিয়েছি, এই সম্পর্ক আগামী দিনে ধারাবাহিক থাকবে।’
এদিকে, শুক্রবার বিকালে জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ও মুজিব জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি নেতারা।
এ সময় জাতীয় পার্টি নেতারা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকৃত্রিম সহায়তা, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন, করোনাকালে বাংলাদেশকে টিকা ও অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিবণ্টনে বাংলাদেশ যেন ন্যায্য হিস্যা পায়, এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন বিরোধী দলের নেতারা। এছাড়া অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান ও স্কলারশিপ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়। দুদেশের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরালো হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতীয় পার্টি নেতারা।
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব অক্ষয় হয়ে থাকবে। ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে আজ ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, মহান স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এই সফরে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী শনিবার (২৭ মার্চ) দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
এছাড়া আগামীকাল শনিবার তিনি সাতক্ষীরায় যশোরেশ্বরী কালী মন্দির পরিদর্শন করবেন। এরপর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসমাধি পরিদর্শন করবেন। নরেন্দ্র মোদি মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওরাকান্দি পরিদর্শন করবেন এবং ওই সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলবেন। শনিবার সন্ধ্যায় তার দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।