ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিজবুত তওহীদ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাত ৮টার সময় কলেজ মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত দুজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে নাসিরনগরে হিজবুত তওহীদের সঙ্গে স্থানীয় ওলামা পরিষদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কিছুদিন পূর্বে হিজবুত তওহীদের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকে লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে থাকে হিজবুত তওহীদের সদস্যরা।
বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে এলে তাদের তৎপরতা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন নাসিরনগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার। স্মারকলিপির পরই হিজবুত তওহীদের একজন নেতা হাফেজ মো. ইদ্রিস মিয়া বাদী হয়ে আদালতে নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
নাসিরনগর থানা পুলিশ মামলার ঘটনার তদন্ত করে এলাকায় শান্তি বজায় রেখে বসবাস করার শর্তে উভয়পক্ষকে সতর্ক করা হয়। এর কিছুদিন পর আবারো হিজবুত তওহীদের সাংগঠনিক কাজ শুরু হলে আবারো শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব।
সোমবার রাতে সৌদি প্রবাসী মো. ইদ্রিস মিয়ার ঘরে ১৫-২০ নারীকে নিয়ে সংগঠনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ইদ্রিস মিয়ার ঘরে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। তখন স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া ইদ্রিসের ঘরে গিয়ে ইসলামবিরোধী বক্তব্যের কারণ জানতে চাইলে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়।
পরে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে হিজবুত তওহীদের পক্ষের সাতজন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষের চারজন আহত হয়। এসময় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে নাসিরনগর থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হিজবুত তওহীদের পক্ষের আহতরা হলেন, মো. সাকিরুল ইসলাম, মো. ইদ্রিস মিয়া, মোছা. জাকিয়া বেগম, খাদিহা আক্তার, উম্মে হানি, রাকি উল্লাহ, রোমান মিয়া ও কামাল রাজা।
অপরদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষের আহতরা হলেন- মো.আবুল খায়ের, মো. আনোয়ার ও মো. সোহাগ মিয়া। আরেকজন আহতের নাম জানা যায়নি।
নাসিরনগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, হিজবুত তওহীদ নাসিরনগরে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে। আমরা বাধা দেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে। রোববার রাতে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর হিজবুত তওহীদ পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। আমরা এর বিচার চাই।
অপরদিকে হিজবুত তওহীদ নেতা হাফেজ মো. রাকিউল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, আমরা হিজবুত তওহীদ দল করি আদর্শিক কারণে। আমরা কারো কোনো ক্ষতি করি না। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো দোকানদার কিছু বিক্রি করতে চাই না। সামাজিকভাবে আমাদের একঘরে করে রেখেছে। সোমবার আমাদের ওপর স্থানীয় লোকজন পরিকল্পিতভাবে বসতঘর ও দোকানে হামলা করে।
নাসিরনগর থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক জানান, বেশকিছু দিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শ দিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সোমবার হঠাৎ করেই দুইপক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত আছে।
সরাইল সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান জানান, যেহেতু ধর্মীয় বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং বিরোধ তাই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
উৎসঃ যুগান্তর