মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি গ্রহণ করবে।
চলতি বছরের ১৮ই মার্চের পর থেকে নেয়া অন্য সব ফি হয় ফেরত দিতে হবে বা টিউশন ফি’র সাথে সমন্বয় করতে হবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না।”
কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ইতোমধ্যে এ ধরণের ফি গ্রহণ করে থাকে তাহলে তা ফেরত দিতে হবে বা টিউশন ফির সাথে সমন্বয় করবে।
এর বাইরেও কোনো ফি নেয়ার পর যদি ব্যয় না করা হয়ে থাকে তাহলে তা ফেরত বা টিউশন ফি’র সাথে সমন্বয় করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের শুরুতে যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন- বা এ ধরণের কোনো ফি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রহণ করতে পারবেনা।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের মতো সব যৌক্তিক ফি নেয়া যাবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোঃ বেলাল হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
“আমরা কিছু খাতের কথা উল্লেখ করে দিয়েছি। এর বাইরেও যদি কোনো ফি নেয়া হয় সেগুলো নেয়া যাবেনা এখন। মাধ্যমিক পর্যাযের সব প্রতিষ্ঠান এখন শুধু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে,” বলছিলেন মি. হোসাইন।
তবে মাধ্যমিক পর্যায়েরা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এ সিদ্ধান্তে শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
“এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেতনের শতভাগ পেলেও শিক্ষকরা সব সুবিধা সরকার থেকে পায়না। তাদের কিছু ফি স্কুলের অর্থ থেকে আসে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোই যদি সব ফি না পায় তাহলে তারা শিক্ষকদের কিভাবে দেবে,” বলছিলেন মি. ইসলাম।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৩৯,০০০।
এসব প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছে এবং এর বিপরীতে শিক্ষক আছেন প্রায় পাঁচ লাখ।
অন্যদিকে বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে পড়া শিক্ষার্থীর মাত্র ছয় দশমিক তিন শতাংশ সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। অবশিষ্ট ৯৩.৬% শিক্ষার্থী পড়ছে ১৯ হাজার ৮০২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
যশোরের ঝিকরগাছার মাটিকুমরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহার আলী বলছেন, অনেক স্কুলে বিশেষ করে গ্রামের দিকের স্কুলগুলোতে টিউশন ফি’র বাইরে আর কোনো ফি এমনিতেও নেয়া হয়না।
“তবে কিছু ফি থেকে পাওয়া অর্থ স্কুলের খরচের কাজেই ব্যয় হয়। তবে আমাদের স্কুলে ৪০০ শিক্ষার্থী আছে। টিউশন ফি ছাড়া তাদের আর কিছু দিতে হয়না,” বলছিলেন মি. আলী।
যদিও নজরুল ইসলাম বলছেন, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খন্ডকালীন শিক্ষক আছে তাদের এখন আর কাজের সুযোগই নেই আবার স্কুলগুলোতে বিদ্যুৎ পানিসহ স্থানভেদে নানা কিছুর বিল বা খরচ আছে।
“স্কুল বন্ধ বললেও আসলে শিক্ষক কর্মচারীদের তো সপ্তাহে একদিন হলেও যেতে হয়। পরীক্ষা হচ্ছে ভিন্ন পন্থায়। অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। এখন স্কুল যদি ফি না পায় এগুলোর সমন্বয় কি করে হবে। আবার শিক্ষকদের বেতনের সাথে স্কুলের যে অংশ আছে সেটিই বা কোথা থেকে আসবে,” বলছিলেন মি. ইসলাম।