বাংলাদেশে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরে বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিশ্চিত করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা খুলনাতে জেল-জরিমানা করা শুরু হয়েছে। খুলনার জেলা প্রশাসন নিজ উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সোমবার বিকেল পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ প্রতিহত করতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এমন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
খুলনায় জেল জরিমানা
খুলনার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেছেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়সে প্রবীণ দেখে সাতজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ৩৩ জনকে এক থেকে দুই দিনের কারাদণ্ড দেয়া হবে।
তিনি বলেছেন, “মানুষ একেবারেই সচেতন নয়। অনেক শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও আমরা সচেতনতার অভাব দেখেছি। যে কারণে এ কঠোর ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
তিনি বলছিলেন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ-নিয়ন্ত্রণ-নির্মূল আইন ২০১৮ অনুসারে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন।
ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জেলা শহর খুলনা।
খুলনা জেলার ৯টি উপজেলা এবং ৫টি থানাতেও মাস্ক পরার এই বাধ্যবাধকতা প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন মি. হোসেন।
বাংলাদেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে ওপরের দিকে থাকা ১৫টি জেলার মধ্যে খুলনা নেই।
জেলা প্রশাসক মি. হোসেন বলেছেন, “সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব জেলা এ কর্মসূচি নিতে পারে, কিন্তু তারা ব্যতিক্রমী অথচ কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার কাজটি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
চালু হতে পারে সারাদেশে
বাংলাদেশে মার্চ মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হবার পর ঘরের বাইরে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মত স্বাস্থ্য বিধি মানাতে বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকবারই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানার দণ্ড দেয়া হয়েছে।
তা সত্ত্বেও গত কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশে সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন যে শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়বে।
সেজন্য আগাম সতর্কতার জন্য নানা পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন যে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে রাস্তাঘাটে ব্যাপক অসচেতনতা দেখা যাচ্ছে।
এমনকি সংক্রমণের দিক থেকে ওপরের দিকে রয়েছে এমন অনেক জেলাতেও পরিস্থিতি একই রকম।
ফলে এখন কর্তৃপক্ষ বলছে, সামনের দিনে খুলনার মত কঠোর ব্যবস্থা অন্যান্য জেলাতেও নেয়া হতে পারে।
স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ এড়াতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবে সরকার।
“মাস্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে, ফলে প্রয়োজনে আমরা মাস্ক সরবারহ করবো, কিন্তু সবাইকে বাড়ির বাইরে মাস্ক পরতেই হবে।
তিনি বলেন, “এজন্য মাইকিংসহ সচেতনতা তৈরির নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু এরপরও যদি কেউ স্বাস্থ্য বিধি না মেনে চলে তার জন্য শাস্তির বিধান আইনে আছে।”
আইনে বলা হয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজের আওতাধীন এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
খুলনা জেলা প্রশাসনের মতো কার্যক্রম নিলে অনেক মানুষ বাধ্য হয়েই সচেতন হবে বলে তিনি মনে করেন। “এজন্য সারা দেশে এ কার্যক্রম নেয়া যেতে পারে। তবে আমরা মানুষকে বুঝিয়ে সচেতন করতে চাই।”
স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাব ঠেকাতে নভেম্বরের শুরুতে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার-যার মূল ব্যাপার হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া কাউকে সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলোতে সেবা দেয়া হবে না।
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেছেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রয়োজন হলে দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করার প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের।