গত এক দশকে যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু ‘মেগা প্রকল্প’ নিয়েছে সরকার। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই বৈদেশিক ঋণনির্ভর। ফলে এ সময়ে বৈদেশিক ঋণ ১২৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল দুই হাজার ৫৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। ১০ বছর পর ২০১৯ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, এক দশকে বৈদেশিক ঋণ প্রায় সোয়া দুই গুণ হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিসটিক্স ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এক দশকের ঋণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন থেকে সোমবার রাতে প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বব্যাকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল তিন হাজার ৫৯৬ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে তিন হাজার ৮৪৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ছিল চার হাজার ৬৮১ কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ২১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ২০১৭ সালে। সে বছর এর পরিমাণ বাড়ে ৮৩৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর ২০১৮ সালে ৫৩২ কোটি ডলার এবং ২০১৯ সালে ৪৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার বেড়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১৯ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ সময়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে। এর বিপরীতে এক দশকে ঋণের সুদ ও আসল বাবদ বাংলাদেশের ব্যয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আসল বা মূল অর্থ পরিশোধ করেছিল ৭৭ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ২০০৯ সালে ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময় সুদ ব্যয় সাড়ে তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে ২০০৯ সালে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১৯ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৯৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এক দশকে দ্বিপক্ষীয় ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ঋণ ছিল ২৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৯ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৮৬ কোটি ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঋণের বড় অংশই দীর্ঘমেয়াদি। উচ্চ সুদ ও কঠিন শর্তের এসব ঋণের বিপরীতে সুদ ব্যয়ও গত এক দশকে সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। তারা বলছেন, যেসব প্রকল্প থেকে রিটার্ন বেশি আসবে, তাতে বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তবে বাছ-বিচার না করে ও সময়োপযোগী না হওয়া সত্ত্বেও অতিব্যয়ের প্রকল্পে এসব ঋণ ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। এ ঋণ পরিশোধ আগামীতে দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।