কুষ্টিয়ার কুমারখালী সরকারি কলেজে ভুয়া সনদে ৯ বছর চাকরি করছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক সাবিরা খাতুন। কলেজটি জাতীয়করণ হওয়ার পর যাচাই-বাছাইয়ে তার নিবন্ধন সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সনদে চাকরির অপরাধে ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমারখালী উপজেলা শহরের বেসরকারি ডিগ্রি কলেজটি সরকারি ঘোষণায় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণের পর শিক্ষকদের সনদ যাচাইয়ে আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক সাবিরা খাতুনের নিবন্ধন সনদ ভুয়া প্রমাণিত বলে অতি সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৬৯৭ স্মারকে সনদ যাচাইসংক্রান্ত চিঠি গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া কলেজের অধ্যক্ষকে ইমেইল মারফত এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। ভুয়া সনদে চাকরির অপরাধে ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে নির্দেশ দেয়া হয় অধ্যক্ষকে।
এনটিআরসিএর প্রেরিত চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ব্যাচের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মর্মে সাবিরা খাতুনের দাখিলকৃত নিবন্ধন সনদের রোল নম্বর ২১৪১০৭৯৬, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮০৫৫৯১১৪ যাচাইকালে সনদটি ভুয়া প্রমাণিত হয়।
এ ছাড়া নিবন্ধন পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২৭ এবং তিনি ওই নিবন্ধন পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ জালিয়াতির আশ্রয়ে ভুয়া সনদে সাবিরা খাতুন ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রভাষক পদে কলেজে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর ২০১১ সালের ১ মে তিনি এমপিওভুক্ত হন। এমপিওভুক্তির পর থেকে দীর্ঘ নয় বছর ধরে অবৈধ পন্থায় সরকারি আর্থিক সুবিধা ভোগ করে আসছেন। তবে এনটিআরসিএর নির্দেশ মোতাবেক কলেজের অধ্যক্ষ অভিযুক্ত প্রভাষকের বিরুদ্ধে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা কিংবা আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অভিযুক্ত প্রভাষকের নিবন্ধন সনদ ভুয়া প্রমাণিত সংক্রান্ত চিঠি এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলেও ওই চিঠিটি অধ্যক্ষের হাতে ডাকযোগে না পৌঁছার অজুহাত দেখিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভুয়া সনদধারী ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে প্রভাষক সাবিরা খাতুনের বক্তব্য জানতে মোবাইলে বারবার কল করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তার স্বামী জাহিদ জানান, বিষয়টি শুনেছি, তবে কীভাবে কী হলো বুঝতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, এক মাস সময় পেলেই আশা করছি ঠিক করে নিতে পারব।
কুমারখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শরিফ হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, প্রভাষক সাবিরা খাতুনের নিবন্ধন সনদ ভুয়া সংক্রান্ত বিষয়টি এনটিআরসির ওয়েবসাইট মারফত জেনেছি। তবে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। চিঠি পাওয়ার পর নির্দেশমতো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমারখালীর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মামুনুর রশিদ বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা নির্দেশনা পাইনি। তবে কলেজ কর্তৃক অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।