অনলাইন ডেস্কঃ বেশকিছু মোবাইল ফোন অ্যাপ একটি কালো ছাপ ফেলে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে। এসব অ্যাপ ব্যবহার করেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে আমাদের তরুণ সমাজ। তারা নৈতিকতাবিরোধী কাজে জড়িত হতেও দ্বিধা করছে না। এসব অ্যাপ ব্যবহার করার অধিকার সবার আছে শুধু এই কারণেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য। অ্যাপসটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, এটি ব্যবহার করে একই সঙ্গে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একটি বোর্ডে (ভিডিও চ্যাটে) যুক্ত হতে পারেন আটজন পর্যন্ত। তারা একই সঙ্গে নিজেদের দেখতে ও শুনতে পারেন। এ ছাড়া তাদের চ্যাটিং (ভিডিও) দেখতে পারেন অ্যাকাউন্টধারী যে কেউ।
দেশে এইসব অ্যাপসগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল গল্প, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয় এখানে। অনেকেই খুঁজতে থাকেন প্রতারণা সুযোগ। কেউ ফাঁদে পা দিলেই তার সর্বস্ব লুটে নেয়ার উপায়ও তাদের জানা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উপদেশমূলক বক্তব্যও প্রচার করা হয় এখানে।
শুধুমাত্র সময় কাটানো কিংবা আগ্রহের বসে অ্যাপসটি ইনস্টল করে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রতারিতরা অ্যাপসটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। অ্যাপসগুলো বন্ধে দরকারি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অ্যাপসগুলো মূলত কারা ব্যবহার করেন এমন বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলত উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, প্রবাসী, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে একাকীত্ব অনুভব করা এবং যেসব নারী বাড়িতে একা অবস্থান করেন তাদের মধ্যেই অ্যাপসটি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই এগুলো বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, প্রযুক্তির ভালো দিকগুলোকে বাদ দিয়ে অনেক সময়ই খারাপ দিকগুলোকে গ্রহণ করেন অনেকে। ‘বিগো লাইভ’, ‘টিকটক’, লাইকির মতো অ্যাপস ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। যেহেতু এই অ্যাপসগুলো দিয়ে প্রতারণার ঘটনা বেশি ঘটছে তাই বিটিআরসি চাইলেই এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে।
অ্যাপস ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের(বিটিআরসি) পক্ষ থেকে খুব কম কিছুই করার থাকে বলে মনে করেন বিটিআরসির সচিব মো. সরওয়ার আলম।
তিনি সময় নিউজকে বলেন, গুগল অ্যাপস স্টোরে হাজারো অ্যাপস রয়েছে। এগুলোকে ভালোমন্দ দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। কে কোন অ্যাপসগুলোকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন বা কেউ এটি দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন কিনা সেটা আমাদের জানার কথা নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেকেরই সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তারাই এগুলো বেশি দেখাশোনা করে। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইজিডব্লিউকে বলে সেটি বন্ধের ব্যবস্থা করি।
তবে এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে যেহেতু অনৈতিক কাজ ও প্রতারণার ঘটনা ঘটছে সেহেতু বিষয়টি খতিয়ে দেখে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অ্যাপসটির বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।
‘বিগো লাইভ’ এমন একটি অ্যাপ যেখানে তরুণ যুবকদের অশ্লীল প্রস্তাব দিয়ে টাকা পাঠানোতে বাধ্য করা হয়। বিদেশে অবস্থানরত যুবকরাই এর ফাঁদে বেশি পড়েন বলেও জানা যায়। অ্যাপটির টেক্সট ও ভিডিও চ্যাটে তরুণীদের আলাপে একাকীত্ব ঘোচাতে গিয়েই বিপদে পড়েন প্রবাসী যুবকের দল। ভারত ও পাকিস্তানে এই অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে তরুণদের মাঝে বাড়ছে এই অ্যাপটির গ্রহণযোগ্যতা।
‘টিকটক’ আরেকটি জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাপের নাম। অপু ভাই নামের এক টিকটক ব্যবহারকারীকে নিয়ে সারাদেশে হইচই পড়ে যায় কয়েক দিন আগেই। তবে এর আগে থেকে সবুজ চুলরঙা এই যুবকের ভিডিওতে সয়লাব হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। এই ভিডিওগুলোর অনেকগুলোতেই নারীবিদ্বেষী কথাবার্তা নেতিবাচক ভঙ্গিমায় ব্যক্ত করেন অপু। টিকটক ভিডিওই এমন একটি বিষয় যেখানে শিক্ষণীয় বলতে কিছু নেই। আছে অশ্লীলতার ব্র্যান্ডিং। টিকটকে পর্নোগ্রাফিকে সমর্থন করে এমন ভিডিও দেখে অনেক দেশেই ব্যান করা হয়েছে অ্যাপটি। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানে এই অ্যাপ ব্যান করা হয়েছে।
শর্ট ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ লাইকি আরেক নতুন বিষফোঁড়া হিসেবে যুক্ত হয়েছে ক্ষতিকর অ্যাপের তালিকায়। এই অ্যাপের সেই ভিডিওগুলোই জনপ্রিয় যেখানে ‘শো অফ’ করা যায়। এই অ্যাপে বাইক স্ট্যান্ট থেকে শুরু করে ভিনদেশি নায়ক নায়িকাদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিমা পর্যন্ত প্রায় সব নেতিবাচক আচরণই অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশে কিশোর গ্যাঙগুলোর মাঝেও ভীষণ জনপ্রিয় এই লাইকি।
এসব অ্যাপ তরুণ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর জেনেও কিছু করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফৌজদারি কোনো অপরাধ না হওয়ায় আপতত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার পরিস্থিতি নেই।