দেশের বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে মোটা অংকের বেতনে লোক নিয়োগ হবে বলে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেখে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার তরুণরা রাজধানীর সেই অভিজাত অফিসে চলে আসেন। যিনি যান, তারই চাকরি হয়। চাকরি পেতে দিতে হয় ঘুষ। কিন্তু কেউ পান না বেতন। কয়েক মাস পর ভুক্তোভোগীরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
রাজধানীর বনানী, গুলশান ও মিরপুরে এরকম তিনটি জমকালো অফিস ও একটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর বনানী থানায় একটি মামলা করেছে সিআইডি।
সিআইড ‘র ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদ পেয়ে বনানী কবরস্থান গেটের বিপরীতে ২৭ নম্বর সড়কের ৪৫ নম্বর বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে ৩০/৩৫ জন মানুষের জটলা অবস্থায় দেখতে পাই। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, ভবনের ষষ্ঠ তলায় এশিয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রত্যাশিত বেকার যুবকরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। আমরাও অফিসটিতে তল্লাশি চালিয়ে প্রতারণার বিভিন্ন প্রমাণ পেয়েছি। এরপর ওই অফিসের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করি।‘
এশিয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস এর মালিক আশরাফ খান ওরফে সুফতান মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায়। নিজেকে এই ব্যক্তি ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। আসলে সে ব্যারিস্টার না। রাজধানীর গুলশা, বনানী ও মিরপুরে অফিস নিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করাই তার কাজ। টাকা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ভুয়া নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেয়।
সিআইডি জানায়, আশরাফ খান রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অফিস নেয়। ট্রাভেল এজেন্সির নামে অফিস নিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো। তার অফিসে যারা আসতেন, সবাইকেই চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নেওয়া হয়। কখনও স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলে, কখনও নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা বলে এবং কখনও জামানতের কথা বলে টাকা নেয়। এসব প্রতারণার জন্য অফিসে আকর্ষণীয় চেহারার নারীদেরও নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে। তারা গ্রাম থেকে আসা বেকার যুবকদের সঙ্গে কথা বলে।
সিআইডি ওই অফিসে রবিবার দুপুরে অন্তত ৩০/৩৫ জন যুবককে পেয়েছে যারা আশরাফ খানকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তারা জানান, মানুষ যখন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারে, তখন আশরাফ খানের অফিস স্টাফরা তাহাদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়।
ভুক্তোভোগীরা সিআইডিকে জানান, তাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে। কিন্তু কোনও চাকরি না দিয়ে টালবাহানা করছে আশরাফ খান।
অফিসটির ম্যানেজার গোলাম মাজেদ (৫০), ম্যানেজার নারায়ণ সরকার (৩৫), অফিস সহকারী মো. মেহেদী (১৯), অফিস সহকারী মো. ইমতিয়াজ (৩১) ও অফিস সহকারী এনায়েত উল্লাহকে (৪০) গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ঢাকা শহরে তাদের মালিকের এ ধরনের আরও অফিস ও মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টার রয়েছে।
কুমিল্লা থেকে আসা ভুক্তোভোগী যুবক নোমান জানান, চাকরির জন্য তার মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০ হাজার টাকার একটি চেক আশরাফ খানকে দিয়েছেন তিনি। তার মতো অনেকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে আশরাফ খান।
অফিসটি থেকে আল ফাইহান মেডিক্যাল চেক-আপের রিকুইজিশন স্লিপ ১২০টি এবং আল ফাইহান মেডিক্যাল সেন্টারের নামে ভুয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট, ভুয়া চিকিৎসকদের সিল, ৩৭টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন ব্যক্তির বায়োডাটা, লেনদেন সংক্রান্ত রেজিস্টার খাতা, মানি রিসিট বই, সোনালী চাকমা নামে ট্রেড লাইসেন্স ও ভুয়া চাকরির নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আশরাফ খান রাজধানীর মিরপুরের একটি বাসায় থাকে। সিআইডির অভিযানের পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। সিআইডি তার চারটি জাতীয় পরিচয়পত্র, তিনটি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন জাল কাগজপত্র পেয়েছে।