চলচ্চিত্র শিল্প তথা সিনেমা হল বাঁচাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা।
গত ২৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনেমা হল বাঁচাতে বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর মাত্র ১০ দিনের মাথায় এই তহবিল গঠন করার খবর মিললো। চলচ্চিত্র নেতাদের অনেকেই জানান, এর বেশিরভাগ টাকা খরচ করা হবে প্রেক্ষাগৃহ পুনরায় চালু ও সংস্কারের কাজে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের ১৯টি সংগঠনের পক্ষ থেকেও আলাদা আবেদনপত্রে চলচ্চিত্র নির্মাণে বরাদ্দ রাখার আর্জি করা হয়েছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বিষয়গুলো জানিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।
গুলজার বলেন, ‘শুধু সিনেমা হল সংস্কার বা চালু হলেও তো হবে না, পাশাপাশি সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। এজন্য বছরে বাণিজ্যিক ধারার অন্তত ৪টি ছবি তৈরির বরাদ্দের জন্য আমরা আবেদন করেছি। অন্তত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে ভালো মানের ছবি তৈরি সম্ভব। আমরা কয়েকদিন আগে সংশ্লিষ্ট সংগঠন মিলে আবেদনপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছিয়েছি।’
এদিকে জানা যায়, ৭০০ কোটি টাকার যে বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার, সেটি সরাসরি সরকারি কোষাগার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হবে। যা খুবই স্বল্প ঋণে ও দীর্ঘ মেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন হল মালিকরা।
বিষয়টি নিয়ে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খসরু বলেন, ‘এটি কোনও ব্যাংকের টাকা নয়। সরাসরি সরকার এই তহবিল গঠন করেছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকে রাখা হবে। আগ্রহীরা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন। যতদূর শুনেছি ১-২ শতাংশ সুদে এটি নেওয়া যাবে। শোধ করতে হবে ২০-২৫ বছর মেয়াদে। সবকিছু ঠিক থাকলে বরাদ্দের টাকাটা দ্রুত ব্যাংকে পৌঁছাবে।’
তিনি আরও জানান, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বসবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। সেখানে ঋণ বিষয়ে চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা পাবেন বলে আশা করছেন। এছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে প্রেক্ষাগৃহ চালুর বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা আসতে যাচ্ছে বলে মনে করেন খসরু।
জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রেক্ষাগৃহগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসবে উক্ত বৈঠকের মাধ্যমে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৭০০ কোটি টাকার এই বড় প্রণোদনার সঠিক বণ্টন নিয়ে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা। অনেকেই বলছেন, নামমাত্র সুদের এই ঋণ পেতে দেশের অনেক অসাধু ব্যক্তি চাল-ডালের গোডাউনকে সিনেমা হল বানিয়েও প্রণোদনা নিতে পারে! যার ফলে, সিনেমা হল বা সিনেমার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। নষ্ট হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও উৎসাহ।
এমন আশঙ্কার বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের ভাষ্য এমন, ‘এমন আশঙ্কা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমাদের চোখ-কান খোলা রাখছি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে আমাদের জন্য যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন সেটি তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। ফলে এটার সঠিক মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। চলচ্চিত্রটাকে বাঁচাতে হলে এই সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে আমাদের।’
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন