বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সময়ে হঠাৎ করে দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স রেকর্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশের কিছুসংখ্যক বিশ্লেষকরা পজিটিভ হিসেবে নিলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু। রেমিট্যান্সের এমন রেকর্ডের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করা উচিৎ। কারণ, আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এই রেমিট্যান্স।
গত জুন মাসে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখসহ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা ছিল বাৎসরিক রেকর্ড। মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশে দেশে করোনার লকডাউন চলাকালে রেমিট্যান্স কমে যায়। মার্চে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৯০ কোটি ডলার, এপ্রিলে ১০৮ কোটি ডলার। জিন্তু জুনে ঈদের মাসে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। ১৫১ কোটি ডলার । সাধারণত ঈদের পরের মাসে রেমিট্যান্স কমলেও গত জুনে রেকর্ড প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পায়। জুলাইয়ে সকল রেকর্ড ভেঙে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স যায় বাংলাদেশে।
রেমিট্যান্স পাঠানোর মধ্যে প্রথম স্থানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। শীর্ষ ১০ রেমিট্যান্স পাঠানোর দেশের মধ্যে ৬ টি দেশ মধ্যপ্রাচ্যের। যারা মমধ্যপ্রাচ্যে আছেন নিশ্চয় জানেন যে, মহামারী করোনায় হাজারো প্রবাসী কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেকের কাজ থাকলেও নেই স্বাভাবিক সময়ের মতো উপার্জন। অসংখ্য ছোট-বড় কোম্পানি স্টাফদের ছুটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জমানো ছুটি থেকে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত ছুটি কাটাতে বাধ্য করছে। ছুটির সময়কার বেতন সাথে দিচ্ছে আবার কোনো কোনো কোম্পানি বেতন ছাড়াই ছুটি কাটাতে বাধ্য করছে।
গত ১৫ আগস্ট দেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন তাভয়াবহ। ‘করোনা সংকটকালে কাজ হারিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার ২১৮ বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফেরত এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। (দৈনিক সমকাল)
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, মহামারীতে সঞ্চিত অর্থ নিয়ে প্রবাসীরা দেশে ফিরছে। দেশে ফেরত প্রবাসীরা প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের। ছুটিতেও যারা আসছে তারাও উপার্জিত কিছু টাকা নিয়ে আসছে। যে প্রবাসী মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠায় সে প্রবাসী একসাথে তিন মাসের ছুটির টাকা পেয়ে একসাথে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে দেশে ফিরছে। ১০ বছর প্রবাসে থাকলে কোম্পানির সার্ভিস হিসেব নিয়ে ভিসা বাতিল করে যে আসছে সেও লাখ দুই লাখ টাকা নিয়ে ফিরছে।
প্রবাসীদের এভাবে দেশে যাওয়াটাই মূলত বিপদ সংকেত। এতে করে পরিষ্কার পরিলক্ষিত হচ্ছে গত দুই তিন মাসের রেমিট্যান্স দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত। এখনো করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরো কত হাজার প্রবাসী কর্মহীন হয়ে ফিরবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবাসীর পরিবার ও রাষ্ট্রকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি।
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহীন
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই