আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ‘সকারের’ (সকার একিউএস ইন্টারন্যাশনাল ডিএমসিসি) ছেড়ে যাওয়া বেগমগঞ্জ-৪ এবং মাদারগঞ্জ-১ গ্যাস কূপ খনন করবে বাপেক্স। তবে এর আগে সকারের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসা করা হবে। এজন্য ওই কোম্পানির পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে পেট্রো বাংলার একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, ‘সকারের ছেড়ে যাওয়া কূপগুলো এখন বাপেক্স খনন করবে। এজন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে এর আগে সকারের দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হবে। তা না-হলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।’
সূত্র জানায়, দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে। এজন্য দেশের সম্ভাবনাময় সব এলাকায় তেল-গ্যাস কূপ খনন করা হচ্ছে। এই দুটি কূপও এত দিনে খনন শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে খনন কাজ পিছিয়ে যায়।
বাপেক্সের সঙ্গে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে খাগড়াছড়ির সেমুতাং-১, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জ-১—এই তিনটি গ্যাস কূপ খননের চুক্তি করে আজারবাইজানের কোম্পানি ‘সকার একিউএস ইন্টারন্যাশনাল ডিএমসিসি’। এরমধ্যে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে খাগড়াছড়ির সেমুতাং-১ কূপ খনন করে সকার কোনও গ্যাস পায়নি। এরপর অন্য দুটি কূপ খনন নিয়ে সকারের সঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বাপেক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সকারের দুর্বলতা রয়েছে। আর সকারও বাপেক্সের বিরুদ্ধে ঠিক সময়ে বিল না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করে। সব মিলিয়ে সকার গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত জানায় বাপেক্সকে। এরমধ্যে সকারের দেনা-পাওনা পরিশোধ করার অনুরোধ জানায় আজারবাইজান সরকার।
সম্প্রতি পেট্রো বাংলা সকারের পাওনা পরিশোধ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি এখন কাজ করছে। পেট্রো বাংলা সূত্র বলছে, সকারের পাওনার পরিমাণ কত তা বিশ্লেষণ চলছে। ওই কোম্পানির সঙ্গেও এ বিষয়ে একটি বৈঠক হবে। তাদের যৌক্তিক পাওনা পরিশোধ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি বাপেক্সের বোর্ড সভায় বেগমগঞ্জ এবং মাদারগঞ্জ কূপ নিজেরা খনন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সকারের সঙ্গে ৩৩ মিলিয়ন ডলারে তিনটি কূপ খনন করার চুক্তি করেছিল বাপেক্স।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ-১ গ্যাস অনুসন্ধান সম্পর্কে জানা যায়, অনেক দিন থেকেই ওই এলাকায় বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হওয়ার খবর প্রকাশ পায়। এরপর জামালপুরের জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সরকারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। পরে বাপেক্স ওই এলাকায় দ্বিতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপ চালিয়ে সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে মাদারগঞ্জকে চিহ্নিত করে। এখন অনুসন্ধান কূপ খনন করে দেখা হবে আদৌ সেখানে কোনও গ্যাস রয়েছে কিনা।
এদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ কূপ সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে এখানে প্রথম কূপ খনন করা হয়। তবে তখন গ্যাস না মেলায় তখন তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে আবারও বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ৩ নম্বর কূপ খনন করা হয়। কিন্তু এরপরও কারিগরি জটিলতা দেখা দেয়। এখন সেখানে আরও একটি কূপ খনন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটিও বাপেক্সের একটি গ্যাসক্ষেত্র।
প্রসঙ্গত, সকার ঠিকাদার হিসেবে বাপেক্সের এই কূপ দুটি কেবলমাত্র খনন করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল।