নড়িয়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ৮৫ বছর বয়সী মমিন আলী সরদার ও তার স্ত্রী লিলু বেগম ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বাড়িতে ছিলেন। এখন ঘরের ভেতরেও তিন ফুট পানি। ছেলে-মেয়েরাও কাছে নেই। দুজনেই তাই ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে। বৃদ্ধ মমিন আলী সরদার বলেন, ‘ঘরের মধ্যে পানি। দুজনের থাকা-খাওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছি।’
বন্যা যত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে ততই দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলায় ৫৫ হাজার পরিবার অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের ভেতরেও পানি উঠে যাওয়ায় অনেকেই এখন আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন।
সোমবার সরজমিনে নড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নড়িয়া পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডসহ নড়িয়া উপজেলার ১৪ ইউনিয়নই এখন বন্যা কবলিত। নড়িয়া এলাকার অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
নড়িয়া উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়ায় প্রায় ২০ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য নড়িয়ায় ৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এর বাইরে নড়িয়া পৌরসভার তিনটি বিদ্যালয়ে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে সাতটি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৯০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ১০ কেজি করে এখন পর্যন্ত ৫২ মেট্টিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
লোনসিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে সবার প্রথমে আসা আটটি পরিবার শুকনো খাবারের প্যাকেট পেলেও বাকি ১৭টি পরিবার এখন পর্যন্ত কোনও সহায়তা পায়নি। এখানে আশ্রয় নেওয়া মায়া রানী বলেন, ‘তিন সন্তান নিয়ে চার দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাইনি। নিজের যা ছিল তা আজকেই শেষ হয়ে যাবে। কাল থেকে বাচ্চাদের কী খাওয়াবো জানি না।’
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তী রূপা রায় বলেন, ‘পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ এলাকা ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটু সময় লাগছে।’
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন