রাসেল ইসলাম,যশোর জেলা প্রতিনিধি: যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে পুরাতন জীর্ণ অকার্যকর গাছ অপসারণ ও সড়কটি ৪ লেনে উন্নতি, যশোর বেনাপোল সড়কের কার্পেটিং এর কাজ সঠিক মাপ অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা, আমড়াখালী হতে বন্দর পর্যন্ত বাইপাসের অসমাপ্ত সংযোগ সড়ক বাস্তবায়ন, বেনাপোল বাইপাস সড়কের সন্মুখে ট্রাফিক আইল্যান্ড রেখে বাইপাসের সাথে মেইন সড়ক জয়েন্ট, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ ও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ৫ দফা দাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন। সাথে সাথে তারা সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি-দাওয়া পুরনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সোমবার ২৭শে জুলাই দুপুর ১২টায় সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর। ভারতের সাথে অসম বাণিজ্যে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর দেশের সিংহভাগ শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রির মালামাল আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে এবং সার্বিকভাবে এখানে ৩০ হাজার কোটি টাকার মালামাল আমদানি-রফতানি হয় এবং ৫ হাজার ৫’শ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে।ইতিমধ্যে এ বন্দরটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং ৪ দেশীয় ট্রানজিট কোরিডোর এই বেনাপোল-পেট্রাপোল। ভারতের কোলকাতা থেকে বেনাপোল অত্যন্ত সন্নিকটে বিধায় কম সময়ে এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করা সম্ভব। প্রতিদিন এই পথে ৮/১০ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে থাকে। দু-দেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির কথা বিবেচনা করে কোলকাতা-বেনাপোল-খুলনা রুটে সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়েছে। আন্তদেশীয় ঐতিহাসিক ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
যশোর-বেনাপোল সড়কের কার্পেটিং এর কাজ সঠিক মাপ অনুযায়ী বাস্তবায়ন না করে উভয় পার্শ্ব হতে তিন ফুট করে বাদ রাখা হয়েছে।৩০ ফুট চওড়া সড়কের পুরোটাই কার্পেটিং করার সুপারিশ করা হলো।সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবী বাস্তবায়নের আবেদন জানানো হয়।
১,যশোর-বেনাপোল সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর আন্তর্জাতিক মানের প্রশস্তকরন এবং পরবর্তীতে ৪ লেন করার লক্ষ্যে পুরাতন জীর্ন এবং অকার্যকর গাছ (যা প্রতিনিয়ত কাভার্ড ভ্যান, দূরপাল্লার পরিবহন এবং মালবাহী ট্রাক পাশের গাছ সহ উপরের ডালের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এমনকি ঝড় হলেই গাছ সড়কের এবং বাড়ির উপরে উল্টে পড়ছে) অপসারন জরুরি। উল্লেখ্য যে চঁাচড়া হতে পালবাড়ি মোড় যশোর-খুলনা রোডে সড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে, বৃদ্ধ শিসু গাছের কারনে যশোর-বেনাপোল সড়কটি চওড়া করা সম্ভব হয়নি।
২. সর্বশেষ ঠিকাদার মেসার্স মোজাহার কোম্পানী যেভাবে যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কটি চওড়া করে কাজ শুরু করেছিল পরবর্তীতে, কাপেটিং এর ক্ষেত্রে সে মোতাবেক কাজ না করে সড়কের উভয় পাশ হতে তিন ফুট- তিন ফুট করে বাদ দিয়ে কার্পেটিং করেছেন। ফলে সড়কটির উভয় পাশের্ব উঁচু-নিচু সৃষ্টি হয়েছে ,উঁচু-নিচুর কারণে দ্রুত গতিতে আশা বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন একে অন্যকে সাইট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধাারণের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।স্থানীয় সকল জনগণের পক্ষ হতে ৩০ফুুুুট চওড়া সড়কের পুরটাই কার্পেটিং করার সুপারিশ জানাচ্ছি।
৩, যশোর -বেনাপোল সড়কের বেনাপোল বাইপাস সড়কের সামনে (ফায়ার সার্ভিসের) ট্রাফিক আইল্যান্ড রেখে বাইপাসের সাথে মেইন সড়কে ২০ গজ জয়েন্ট সড়ক নির্মান জরুরী। নাভারন ব্রীজের পশ্চিম পাশে কমপক্ষে ১০/১২ ফিট সড়ক চওড়া করা আবশ্যক (যেহেতু সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে)। গদখালি ব্রীজের পশ্চিম পাশে এবং বেনেয়ালি বাকে (টার্নিং পয়েন্ট) দক্ষিণ পাশে সড়কটি ৫/৭ ফিট চওড়া করা জরুরী। যশোর চঁাচড়া মোড়ে গোল চত্বরটি ছোট করা এবং দৃষ্টিনন্দন করাসহ সড়কটি চওড়া করা প্রয়োজন।
৪,আমড়াখালী হতে বন্দর পর্যন্ত বাইপাসের অসমাপ্ত সংযোগ সড়ক বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
৫, স্থলবন্দর বেনাপোলে ৫০,শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন জেলা যশোর। আর যশোরকে আরও সমৃদ্ধ করেছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান এই বেনাপোল। ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে এসে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরকে একটি আধুনিক বন্দরে পরিনত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এ অদম্য চেষ্টা, সে কারণে আমাদের এই লড়াইয়ে আপনারাও প্রথম সারির সৈনিক। আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুজ্জামানসহ কার্যকরী কমিটির নেতৃবন্দ, স্থানীয় প্রেসক্লাব এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ যশোর ও বেনাপোলের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।