এম আই সুমন,ইবি প্রতিনিধি: ব্যস্ততম গোধূলি,অত:পর সরব বিকেল পেরিয়ে আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। কোলাহল মহাসড়কের পাশে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক ঘিরে শিক্ষার্থীরা চেঁচামেচিতে ব্যস্ত। সেলফি, গ্রুপ ফটো আর গানে উত্তেজনায় একাকার মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের চারপাশ। রংবেরংয়ের আল্পনায় সাজানো হয়েছে মূল ফটকের সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের শাখা সড়কগুলো। একটু সামনে আগালেই লাল-নীল বাতিময় পোশাকে প্রতিটি হলের আলোকিত দৃশ্য ভোলার নয়।
বলছিলাম গত বছরের ঠিক এই সময়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মনোমুগ্ধকর স্মৃতি আর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। এভাবে প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই প্রায় প্রতিবছরই ছিল ব্যতিক্রমী জমকালো আয়োজন।
নিয়তির পরিহাসে মহামারী করোনার কারণে এবছর ‘নীরব’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর। নেই শিক্ষার্থীদের কোলাহল আর প্রশাসনের কর্মসূচির ব্যস্ততা। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে শুধু সুনসান নীরবতা।
সবুজে আচ্ছাদিত অপরূপ এ ক্যাম্পাস দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে এখন ৪২-এ পা রাখতে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭৫ একরের আলোর বাতিঘর এটি। চলতি বছরের ২২ এ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪২তম জন্মবার্ষিকী।
করোনার কারণে দীর্ঘ ৮ মাস বন্ধের পর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসকে একনজর না দেখার আক্ষেপে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে শুন্যতা আর হাহাকার। তবুও প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসকে একনজর দেখতে প্রস্তুত আশেপাশের জেলা ও মেসে অবস্থানকারী ইবি শিক্ষার্থীরা। দূর-দূরান্ত থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিবসটিকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলছেন না অন্যরা।
স্বাধীনতার পর প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের শান্তিডাঙায় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রমের সূচনা। ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এখানে। বর্তমানে ৮ অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক ও কলা অনুষদের সঙ্গে রয়েছে ধর্মতত্ব অনুষদ। এই ধর্মতত্ব অনুষদই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব। এ অনুষদে কুরআন, হাদিস ও দাওয়াহ নামে তিনটি বিষয় রয়েছে। যেখানে ইসলাম ও তাদের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে বিস্তর গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ইবির শিক্ষার্থী প্রায় ১৮ হাজার। যার মধ্যে স্নাতকে অধ্যয়নরত সাড়ে ১৩ হাজার এবং স্নাতকোত্তরে পড়াশুনা করছেন আড়াই হাজারের কাছাকাছি।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড.শেখ আব্দুস সালাম।
গবেষণাধর্মী কার্যক্রমে প্রসার, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলাফলের কৃতিত্বস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদক, বিদেশে উন্নত স্কলারশিপের ব্যবস্থা, ক্রীড়াঙ্গনে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নের খেতাব এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করে বিদ্যাপীঠটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করেছে।
শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারের জন্য নতুন বিভাগ খোলার পাশাপাশি নির্মিত হচ্ছে নতুন একাডেমিক ভবন। এরই সাথে সংস্কারমুখী কার্যক্রমে এটি মেলে ধরেছে নিজেকে অনন্যভাবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণ করে দিবসটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা স্বপ্ন উঁকি দিলেও দাবি উঠেছে নানা সমস্যা সমাধান এবং সংশোধনের।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন গতিশীলতা অক্ষুণ্ণ ও স্বকীয়তা বজায় রাখা, গবেষণাধর্মী কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব স্থাপন এবং প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সেশনজট শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা, শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য দূরীকরণ, চলমান শিক্ষাবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসকে উচ্চগতির ওয়াইফাই জোনের আওতায় নিয়ে আনা, প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল প্রদানে কার্যকরী পদক্ষেপ, প্রতিটি হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শিক্ষাজীবন শেষে সার্টিফিকেট উত্তোলনে সহজ পদ্ধতির ব্যবস্থা, অধিক পরিমাণে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন এবং পরিবহন সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের কর্মীরা।
শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি বিবেচনায় চাহিদা পূরণের মাধ্যমে শিক্ষাসেবা ও অন্যান্য খাতে ক্রমাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অদূর ভবিষ্যতে মানসম্মত এবং বিশ্বমানের ক্যাম্পাসে পরিণত হবে বলে মনে করেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।