পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন কোনো মডেল হতে পারে না। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সেটা করব ইনশাল্লাহ।
তিনি রোববার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাবের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘ডিকাব টক’-এ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। ডিকাবের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, নিকট অতীতে দুইটি মডেলে নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ মডেলের নির্বাচনের ফলাফল আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল। আরেকটি মডেলের ফল ছিল ২০০৭-০৮ মেয়াদকালের অনির্বাচিত সরকার। আগামী নির্বাচন কোন মডেলে হবে? এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটা একটা সার্কাস্টিক প্রশ্ন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন কোনো মডেল হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, আমরা জনগণের জন্য অনেক কিছু করেছি। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট যাচাই করতে চাই। যারা গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে চান না, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হননি, যে দলের জন্ম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে হয়নি; তারা নিজেরা কিছু করতে না পারলেও গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্যে সহযোগিতা না করে অসহযোগিতা করে, তারা গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করবেন এটাই স্বাভাবিক। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি কারণ জামায়াত আসেনি। জামায়াত আসতে পারছিল না। ২০১৮ সালে তারা ছিলেন নেতৃত্ব শূন্য। আওয়ামী লীগ থেকে চলে যাওয়া একজন নেতাকে তাদের নেতা হিসাবে দাঁড় করিয়েছিলেন। সেটি যে বিএনপির অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বা হয়নি সেটাতো যে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকই বুঝতে পারেন। ২০২৩ ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি যখনই হোক না কেন, এই নির্বাচন যেন অবাধ হয়, সুষ্ঠু হয়, গ্রহণযোগ্য হয়; এটা করার জন্যে শেখ হাসিনার সরকার শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সেটা করব ইনশাল্লাহ’।
সরকার কোনো বিদেশি চাপ অনুভব করছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া একটি নির্বাচন হয়েছিল। সেই সরকারটি টিকেনি। ফলে অনেকের শঙ্কা ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার টিকবে কিনা। ২০১৪ সালে আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তার তিন দিনের মাথায় একটি ডিপ্লোম্যাটিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছিলাম। সেই ডিপ্লোম্যাটিক ব্রিফিংয়ে কেউই কিছু বলেননি। তবে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, আমরা একটি নতুন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বর্ষাকালের আগেই দেখতে চাই। এ ব্যাপারে আমাকে আগে থেকে ব্রিফ করা না হলেও আমি স্বতস্ফূর্তভাবে বলেছিলাম, এটা খুবই উচ্চাভিলাষী শোনাচ্ছে। আমরা নির্বিঘ্নে সরকার পরিচালনা করেছি। ওটাকে যদি চাপ অনুভব না করি তবে বর্তমান সময়ে কোনো কিছুতেই চাপ অনুভব করছি না। সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের ম্যান্ডেট অনুযায়ী, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যাবে। দ্বিধা ও দ্ব্যর্থহীনভাবে কাজ করে যাবে। যেদিন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবেন সেই দিন থেকে নির্বাচনি বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন বিষয়ে কমিশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এখানে থমকে যাওয়া, ফিরে দেখা বা কোনো সন্দেহের বশবতি হয়ে ভীতিতো অনেক দূরের কথা; আওয়ামী লীগ সরকার এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার অভিধানে ভীতি শব্দটি নেই।
ব্রিকসে বাংলাদেশ আবেদন করেছে কিনা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ব্রিকসে আবেদনের কোনো ফরম নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিকস চেয়ারম্যানের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ব্রিকসে সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তার ফলোআপ হিসাবে আমরা একটা আগ্রহ ব্যক্ত করে একটা চিঠি দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করতে বলিনি। আমরা অতীতেও এটা বলেছি। তারপরও তারা যা করেন তা দুঃখজনক। আমরা এমন মন্তব্যকে স্বাগত জানাইনি। বিদেশিরা শুধু পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেন। তার বাইরে বিদেশি কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেব না।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লিজ দেওয়ার কোনো প্রস্তাব আছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন তার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। এটা নিয়ে আমি নতুন করে কিছু বলতে চাই না। বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে তো অবশ্যই ষড়যন্ত্র হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে মার্কিন চাপে ভারতকে গ্যাস দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছি। তখনতো কেউ বিশ্লেষণ করে বলেননি যে, শেখ হাসিনা কেন ভারতকে গ্যাস দিলেন না! শেখ হাসিনা যখন বলছেন, সেগুলো অভিজ্ঞতা থেকেই বলছেন, সেগুলো আমলে অবশ্যই নিতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব দূরের কথা, বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ হানি হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা নেবেন না।
এয়ারবাস ক্রয় নিয়ে অভিযোগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এয়ারবাসের মালিকানা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানার। কোনো চুক্তিও হয়নি। রাজনৈতিক দল বলে দিচ্ছে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন। তারা যখন দুর্নীতি করেছেন, তখন রাষ্ট্রের সঙ্গেও বোধ হয় দুর্নীতি করেছেন।
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আরও উন্নতি করব। তারপরও যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হয় তবে আমরা বুঝতে পারব কেন এটা করা হয়েছিল। এটার ব্যাপারে আমরা উচ্চকণ্ঠ হবো।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপ এবং কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬৯ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বে শান্তিরক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন। তাদের অবদানকে হেয় করে এসব বক্তব্য। এসব বক্তব্য যেই দেন না কেন, তিনি কংগ্রেসম্যান কিংবা প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট যেই হোন; তিনি বাংলাদেশের শত্রু। আর যেসব বাংলাদেশি তাদেরকে এসব বক্তব্য দেওয়াচ্ছেন তারাও বাংলাদেশের শত্রু।