হেফাজতে ইসলামের ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর ও আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়াত আমীর শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মো. ইউসুফকেও নতুন কমিটিতে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে। তবে বাদ পড়েছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেকে। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেন বর্তমান মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী।
হেফাজতের ৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নায়েবে আমির হিসেবে রাখা হয়েছে নয়জনকে। তারা হলেন- মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট) ও মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুবসহ (বরিশাল), মাওলানা আবদুল হক (ময়মনসিংহ), মাওলানা ইয়াহইয়া (হাটহাজারী মাদরাসা), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ মাদরাসা), মাওলানা তাজুল ইসলাম ও মাওলানা মুফতী জসিমুদ্দীন (হাটহাজারী মাদরাসা)।
যুগ্ম মহাসচিব পাঁচ জন হলেন- মাওলানা সাজেদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর) ও মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।
সহকারী মহাসচিব হিসেবে আছেন মাওলানা জহুরুল ইসলাম ও মাওলানা ইউসুফ মাদানী। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম), অর্থ সম্পাদক হিসেবে মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আলী (মেখল) ও সহ-অর্থ সম্পাদক হিসেবে আছেন মাওলানা মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট)।
প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানীকে (সাভার) এবং সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা জামাল উদ্দীনকে (কুড়িগ্রাম)। দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (উত্তরা) এবং সহকারী দাওয়া হিসেবে আছেন মাওলানা ওরম ফারুক (নোয়াখালী)।
এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে নয়জনকে।
তারা হলেন- মাওলানা মোবারাকুল্লাহ (বি.বাড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ (মাদানীনগর), মাওলানা ফোরকানুল্লাহ খলিল (চট্টগ্রাম), মাওলানা মোশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা রশিদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ফতেহপুরী) এবং মাওলানা মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।
কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন- সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ বিতর্কে জড়িয়ে পড়া নেতারা। একইভাবে আল্লামা আহমদ শফীর হত্যা মামলার অভিযুক্ত নেতাদেরও বাদ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলাম জেহাদী বলেন, ভবিষ্যতে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া জেলা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি অ’রাজনৈতিক ব্যক্তি হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় একটি খাস কমিটিও ঘোষণা করেন সংগঠনের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, হেফাজতের এই খাস কমিটি “মজলিসে শুরা” হিসাবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া হেফাজতের মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে বিবেচিত হবে। যারা সংগঠনের যে কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।
ওই খাস কমিটিতে রয়েছেন, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জুনায়েদ বাবুনগরী, আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, নূরুল ইসলাম, মিযানুর রহমান চৌধুরী (পীর সাহেব দেওনা), সাজেদুর রহমান, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আল্লামা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ী, সিলেট), আব্দুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মুহিউদ্দীন রব্বানী, (সাভার ঢাকা)।
কেন গত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি তৎকালীন আমির ওলামায়ে কেমারদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটির বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।
যারা কারাগারে আছেন, তাদেরকে অপরাধী মনে করে কমিটিতে রাখা হয়নি কি জানতে চাইলে নবনির্বাচিত কমিটির মহাসচিব বলেন, কাউকে অপরাধী মনে করার ক্ষমতা আমাদের নেই। অপরাধী মনে করতে পারে আদালত।
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফী বড় ছেলে ইউসুফ মাদানীকে আপনাদের কমিটি স্থান পেয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, এই কমিটি মানেন না। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্গে তার যে কথা হয়েছে, তিনি কমিটিতে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি কমিটি মানেন না বলে যদি কোনও কথা বলে থাকেন, সেটা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন। আমাদেরকে এই রকম কিছু বলেন নাই।
হেফাজতের শফী পন্থীদের সঙ্গে আপনাদের বিভাজন কি দূর হয়েছে কিনা, তারা তো আপনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, হেফাজতে ইসলামের কমিটি একটি। অন্য কোনও হেফাজত নেই। আর বিদ্রোহের কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।
কমিটি গঠন করে কতটা খুশি জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, কমিটি গঠন করে আমরা খুশি। তবে, শঙ্কা যে দায়িত্ব আমাদের ওপর তা কতটুকু পালন করতে পারবো সেটা নিয়ে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ই নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে গত ২৫, ২৬ ও ২৭শে মার্চ হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়। এর সরকারের চাপের মুখে পড়ে গত ২৫শে এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।