ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি ইসলামিক ভাবধারার সংগঠন আয়োজিত ‘কুরআন পাঠ প্রতিযোগিতা-২০২২’-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হাফেজ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান ‘হাফেজ সম্মেলন’-এর জন্যে বুকিং দেয়া অডিটোরিয়ামে একই দিনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনস্থ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে হাফেজ সম্মেলনটি হওয়ার কথা ছিল।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান এবং সভাপতিত্ব করার কথা ছিল ঢাবির আরবী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আল মারুফের। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশনের বুকিং বাতিল করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। অথচ আব্দুল্লাহ আল মারুফের রেফারেন্সে তিনি নিজেই এটির জন্য অডিটোরিয়াম বুকিং দিয়েছিলেন। অনেকেই মনে করছেন, ছাত্রলীগের চাপের কারণেই তিনি এটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে শুধু হাফেজ সম্মেলনের জন্যে বুকিং বাতিল করেই ক্ষান্ত হয়নি ছাত্রলীগ। একইসাথে কর্মসূচিস্থলে তাদের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। ‘শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রস্তুতিসভা’ নামক একটি কর্মসূচি বিষয়ে সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের চিরকালের শোকের মাস আগস্টে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ সকল শহীদ স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মাসব্যাপী সার্বিক কর্মসূচি নির্ধারণের লক্ষ্যে আগামীকাল (০২ আগস্ট, ২০২২) সকাল ১১টায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
কর্মসূচি বাতিলের বিষয়ে দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর হামিদুর রশিদ জামিল বলেন, আমরা এক সপ্তাহ আগে মারুফ স্যারের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আমাদেরকে ২ তারিখের জন্যে অডিটোরিয়াম ভাড়া দেয়া হয়। আমাদের পুরস্কার প্রস্তুত, অতিথি প্রস্তুত কিন্তু হুট করে গতকাল মারুফ স্যার ফোন দিয়ে বললেন যে, জিয়া স্যার বলেছেন, তোমাদের প্রোগ্রামটা করতে দেয়া হবে না, এটা তোমরা ক্যান্সেল করো। যার ফলে আমরা ক্যান্সেল করতে বাধ্য হয়েছি। কোনো কারণ না জানিয়েই ক্যান্সেল করতে বলেছে। এই ক্যাম্পাসে সবাই গেট টুগেদার করতে পারে, বাইরে থেকে মানুষ এসে অনুষ্ঠান করে, কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসের হাফেজরা কেন করতে পারবো না? ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হাফেজ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে হাফেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ বরাবরই ইসলামী কর্মকাণ্ডকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এবারও তারা সেই কাজটিই করেছে। হাফেজ সম্মেলন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, তবুও এটাকে বাধাগ্রস্ত করা ছাত্রলীগের ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষই প্রকাশ করে। তবে অধ্যাপক জিয়া রহমানের দাবি, প্রশাসন চাইলে যেকোনো প্রোগ্রাম বাতিল করার অধিকার তাদের রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের তো যেকোনো প্রোগ্রাম বাতিল করার রাইট আছে। আমাদের পরীক্ষার কাজ চলতেছে। এই মুহূর্তে আমরা দিচ্ছি না কাউকে। সেখানে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো প্রোগ্রাম নেই। তবে ছাত্রলীগের কর্মসূচির বিষয়ে সাদ্দাম হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।