লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ করার একদিন পরেই ওই সড়কে হাত দিতেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং। ফলে রাস্তার কাজের মান নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। আর ঐ সময় কাজ রেখে পালিয়েছেন ঠিকাদারসহ প্রকৌশলীর অধিদপ্তরের লোকজন। এদিকে এক সপ্তাহ আগে ওই সড়কে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান কাজ বন্ধ করেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের তুষভান্ডার (রাজবাড়ি রোড) থেকে দলগ্রাম (খোকা চেয়ারম্যানের বাড়ি) পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ ফুট প্রস্থের সড়কটি সংস্কারের কাজ পায় ‘বিনিময় ট্রেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজটি কমিশনে ‘কিনে নেন জেলার দু’জন ঠিকাদার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর(এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় তুষভান্ডার-দলগ্রাম রাস্তা সংস্কারের কাজটি দেখভাল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজামানকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে আসেন কালীগঞ্জের ইউএনও রবিউল হাসান। এসময় রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়া নিম্নমানের ও ‘থিকনেস’ কমসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। সেই সাথে উপজেলা প্রকৌশলীকে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই আবারো নিম্নমানের সামগ্রীসহ একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। তাদের পাশাপাশি এলজিইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ।
শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাত দিয়ে টানতেই রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ ঘটনায় সেখানে উপস্থিত লোকজন নানা ধরণের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা বলেন, ‘রাস্তার কাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। যেভাবে কাজ করেছে সেটাকে কাজ বলা যায় না। তারা দাবী করেন নিম্নমানে বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার কাজের বিষয়ে আমরা কিছু বললেই ঠিকাদারের লোকজন আমাদের উপর উল্টো গরম দেখান।
কাজটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নতুন কার্পেটিং হাত দিয়ে টানলে উঠে আসবেই। দুই থেকে তিনদিন পর তা আর উঠে আসবে না’ বলে তিনি দাবী করেন। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিম্নমানের কাজ প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
উৎসঃ ইত্তেফাক