তিমির বনিক, মৌলভীবাজার থেকে: এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে প্রতি বছরই হয় বাদামের চাষ। হাকালুকি হাওরের মাটি বাদাম চাষের উপযোগী ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদাম চাষে দিনদিন আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা। সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে হাকালুকি হাওরে বাদাম চাষে আশার আলো দেখবেন চাষীরা। বর্ষার হাকালুকি হাওরে থাকে অবিরাম জলরাশি। কিন্তু শীত মৌসুমে হাকালুকির বুক চিরে চারিদিকে শুধু রবিশস্যের সবুজে সমারোহ। এ সময় পুরো হাওর যেন সবুজের হাতছানি দিয়ে ডাকে সবাইকে। শীত মৌসুমে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও এলাকার হাকালুকি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফসলের মাঠ। ফসলের সবুজ মাঠের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আকর্ষণীয় বাদাম ক্ষেতের মাঠ। বাদামের মাঠে কাজ করার সময় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর থেকে হাওরের বুকে বাদামের চাষ হয়ে আসছে। কম খরচে ফলন ভালো হওয়ায় বেশিরভাগ চাষি অন্যান্য ক্ষেতের পাশাপাশি এখন বাদাম চাষে নজর দিচ্ছেন। বাদামের পাশাপাশি অনেকে একই জমিতে সম্বনিত ভাবে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন। আলাপকালে বাদাম চাষী মোঃ হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছর থেকে যাবত আমি বাদাম চাষ করছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে ৮ কেজি বাদামের বীজ দিয়েছে। এছাড়াও বাজার থেকে আমি আরো বীজ এনে মোট আড়াই কিয়ারে বাদাম রোপণ করেছি। এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছে আমার। এবছর ২ কিয়ার জায়গায় বাদামের চাষ করেছি। এ বছর আশা করছি ভালো বাদাম উৎপাদন হবে। তিনি আরও বলেন, বাদামের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি চাষও শুরু করেছি। বিশেষ করে বাদামের পাশাপাশি, কুমড়া ও সূর্যমুখী চাষ করছি। এগুলো চাষ করে বেশ লাভবান হব, ইনশাআল্লাহ। জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্ম’দ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলায় এবছর বেশ কয়েকজন কৃষক জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজ প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে হাকালুকি হাওরে। বাদাম চাষের জন্য হাকালুকির মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে বাদামের ফলন ভালো হয়। এছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে। আশা করছি এবার বাদামের ভালো ফলন হবে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, জেলায় ধীরে ধীরে বাদাম চাষের চাহিদা বাড়ছে। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হচ্ছে। রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।